বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে অবরুদ্ধ বরিশাল

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৬:৫৬ পিএম

রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

আগামী ৫ নভেম্বর শনিবার বরিশাল বিভাগে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। দলের এই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে এর মধ্যে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা। তাছাড়া সমাবেশ সফল করতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে চলছে মঞ্চ তৈরীর কাজ। 

আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে সমাবেশের মাঠ সাজানোর সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা।

এদিকে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে পদে পদে বাধা-বিপত্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। তারা অভিযোগ করেছেন, সমাবেশ বানচাল করতে সরকার একের পর এক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা বাস, লঞ্চ বন্ধ করে গোটা বরিশালবাসীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা।

তাদের দাবি সমাবেশে গণসমাগম ঠেকাতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল-ভোলা নৌ-রুটে লঞ্চ এবং স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। একই দিন বিকাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে ভাড়ায় চালিত মোইক্রোবাসগুলো। এছাড়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ শুক্রবার থেকে সড়ক পথে যাত্রীবাহী বাস এবং তিন চাকার গণপরিবহনে পাল্টাপাল্টি ধর্মঘট শুরু হবে। তার ওপর সমাবেশে আশা নেতাকর্মীরা উঠতে পারছেন না আবাসিক হোটেলে। এমনকি সমাবেশ স্থলেও অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু উদ্যানের অর্ধেকাংশ দখল করে রেখেছে প্রশাসন। আবার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নগরজুড়ে শোডাউন দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।

জানা গেছে, ৫ নভেম্বর বরিশালে বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। কর্মসূচিকে ঘিরে এর মধ্যে বরিশালে আসতে শুরু করেছে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গত দুইদিন ধরেই আসতে শুরু করা নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সমাবেশস্থলে। সেখানে মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি চলছে স্লোগানও। বিএনপি নেতাদের দাবি অনুযায়ী গত দুইদিন ১০-১৫ হাজারের অধিক মানুষ সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য বরিশাল নগরীতে অবস্থান নিয়েছে।

এদিকে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে বরিশালে একের পর এক চলছে ধর্মঘটের হিড়িক। গত কয়েকদিন আগেই যাত্রীবাহী বাস এবং থ্রি-হুলারসহ তিন চাকার যানের ধর্মঘট ডেকেছে দুই সংগঠন। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশালে ধর্মঘট পালন করবে দুটি সংগঠন। সে হিসেবে শুক্রবার থেকেই বরিশালে ধর্মঘট শুরু হচ্ছে। তবে তার আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বরিশাল-ভোলা নৌ রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ ও স্পিডবোট। এর ফলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল নদী বন্দর থেকে কোনো লঞ্চ ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। আবার বরিশাল ডিসি ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটগুলো ছেড়ে যাচ্ছে ভোলার উদ্দেশে। সেখানে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে শূন্য বোট ফিরে আসতে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাওয়া স্পিডবোটগুলোতে আপ-ডাউনের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা নেই লঞ্চ শ্রমিকদের। তারা বলছেন, মালিকরা বলেছে লঞ্চ বন্ধ রাখতে। সে কারণে তারা লঞ্চ বন্ধ রেখেছেন। তবে মালিকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

যদিও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, ভোলায় আওলাদ নামক একটি লঞ্চে বুধবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুধু ভোলা রুটে লঞ্চ চলছে না। তবে মেহেন্দিগঞ্জ ও মজুচৌধুরীরহাট রুটের লঞ্চগুলো এখনো চলাচল করছে। 

তবে লঞ্চ মালিকদের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বরিশাল-ভোলার পাশাপাশি শুক্রবার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করা হতে পারে।

এদিকে লঞ্চ বন্ধের পরে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বরিশালের রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ীরাও তাদের মাইক্রোবাসগুলো বন্ধ রেখেছেন। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত তারা মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ রাখবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বরিশাল জেলা ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, আগামী ৪ ও ৫ নভেম্বর আমাদের তেমন কোনো ট্রিপ হবে না। এজন্য আমরা মাইক্রোবাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে জরুরি সেবা যেমন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের সেবা দেব।

এই শ্রমিক নেতা বলেন, বরিশাল জেলায় আমাদের সমিতির আওতায় ৭০০ গাড়ি চলাচল করে। শহরে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় মাইক্রোবাস চালকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে, যদি হামলা হয় তাহলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এই ক্ষতির মুখে যেন না পরতে হয় এজন্যই আপাতত না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, গণসমাবেশ আয়োজনে বঙ্গবন্ধু উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হলেও মাঠের পুরোটা ব্যবহার করতে পারছে না বিএনপি। এমনকি মাঠের স্থায়ী মঞ্চও পাচ্ছেন না তারা। মাঠের পশ্চিম অংশে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করছে বিএনপি।

সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দেখা যায়-মাঠের অর্ধেকটায় বাঁশ গেড়ে প্যান্ডেল তৈরি করছেন শ্রমিকরা। ৭ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানের ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ১৬টি সেতু বরিশালের। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন বরিশালের রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মূলমঞ্চ ঘিরে। মঞ্চের সামনের অংশে বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার পর গণসমাবেশ করার জন্য বঙ্গবন্ধু উদ্যান চেয়ে আবেদন করে বিএনপি। তারা অন্য কোথাও ভেন্যু চাইলে হয়তো জটিলতা হতো না। ঘূর্ণিঝড় ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠে বালু ফেলা হয়েছে। প্যান্ডেল নির্মাণ কাজও বহুদূর এগিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বিএনপিকে বলেছি মঞ্চ ও প্যান্ডেলের অংশটুকু বাদ রেখে সভা করতে।


এদিকে একই স্থানে দুটি কর্মসূচির আয়োজন বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাদের মধ্যে বিএনপির কর্মসূচিতে জনসমাগম বেশি হলে সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থলের ক্ষতি হতে পারে। এমনটি ঘটলে বিশৃঙ্খলা ঠেকানো যাবে না বলে মনে করেন অনেকে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে, কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে।


এ প্রসঙ্গে, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, জেলা প্রশাসক আমাদের জানায় মাঠের একাংশে তাদের মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। সেই অংশটুকু বাদ দিয়ে জনসভা করতে বলেছেন। এখন দেখছি-মাঠের অর্ধেকটাই দখল করে চলছে তাদের (প্রশাসন) প্যান্ডেল নির্মাণ। এমনকি স্থায়ী মঞ্চও ব্যবহার করতে পারছি না। ৫ নভেম্বর এখানে জনসমুদ্র হবে। যেটুকু মাঠ দেওয়া হয়েছে তাতে অর্ধেকও সংকুলান হবে না।


এদিকে ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএন‌পির বিভাগীয় গণসমাবেশের কারণেই লঞ্চ এবং মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন। 


তিনি বলেন, কোনো কিছুতেই বরিশালের গণসমাবেশে জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। প্রয়োজনে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে, সাইকেলে, ট্রলার এবং নৌকায় চেপে সমাবেশে আসবে।


বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ.জেড.এম জাহিদ হাসান বলেন, চট্টগ্রামসহ দেশের ৪টি বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশগুলো জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। সরকারি দল ও প্রশাসনের সকল বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করে গণসমাবেশগুলো মহাসমাবেশে রূপান্তরিত হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর বরিশাল তথা দক্ষিণ জনপদের মানুষ গণসমাবেশ সফল করে প্রমাণ করে দেবে দেশবাসী ভোটের অধিকার হরণকারী অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ চায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh