চরকায় সুতা কেটে রাজবন বিহারে চীবর দানোৎসব শুরু

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২২, ০৭:৩৮ পিএম

চীবর দানোৎসব উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল (চাকমা রাজা) চিফ দেবাশীষ রায়। ছবি: রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

চীবর দানোৎসব উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল (চাকমা রাজা) চিফ দেবাশীষ রায়। ছবি: রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

প্রাণঘাতী করোনার উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে গেল দুই বছর চরকায় সুতা কেটে চীবর তৈরি উৎসব না হলেও এবার জাকজমকভাবে চীবর দানোৎসবের সূচনা হয়েছে রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে। 

দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন মন্দির রাজবন বিহারে আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকালে দানোত্তম চীবর দানোৎসবের প্রথম দিনে বেইনঘর উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল (চাকমা রাজা) চিফ দেবাশীষ রায়। চরতায় সুতা কেটে উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চিফের সহধর্মিণী (চাকমা রানী) য়েন য়েন। এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রাচীন এই বৌদ্ধ বিহারে উদযাপিত হচ্ছে ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসব।

উদ্বোধনের আগে বেইন ঘরে আগত পূর্ণার্থীরা রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু-সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের কাছ থেকে পঞ্চশীল গ্রহণ করেছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন- রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমীয় খীসা, সহ-সভাপতি নিরূপা দেওয়ান, আইনজীবী সুস্মিতা চাকমা প্রমুখ।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেছেন, বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্ব করোনা মহামারী পরিপূর্ণভাবে কাটিয়ে উঠতে না পারলেও এর প্রভাব কিছুটা রয়েছে। মহামারী করোনা, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া দূর হোক সেই প্রার্থনা করি। দুই বছর করোনার কারণে রাবজন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব ভালোভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তাই এবছর পরিপূর্ণভাবে আয়োজনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজবন বিহার কর্তৃপক্ষ।

রাজবন বিহার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর বেইনের (কোমর তাঁত) মাধ্যমে তুলা থেকে সুতা তৈরি, সেই সুতা দিয়ে কাপড় বুনন, রঙ ও সেলাই করে চীবর (রঙ বস্ত্র) তৈরিতে দুই শতাধিক বেইনে প্রায় কয়েক হাজার পূর্ণার্থী সারারাত চীবর প্রস্তুত করবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি করা চীবর শুক্রবার দুপুরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে লক্ষাধিক পূর্ণার্থীর উপস্থিতিতে ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্য দান করা হবে। চীবর উৎসর্গের মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হয় চীবর দানোৎসব।

এদিকে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারো তিন পার্বত্য জেলা থেকে বিপুল বৌদ্ধ পূর্ণার্থীর সমাগম ঘটছে রাজবন বিহারে। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজবন বিহারের পাশে মেলায় স্টল বসেছে। মেলায়  পাহাড়িদের তৈরি হস্তশিল্প, বস্ত্র, ধর্মীয় বইপত্র, নানান স্বাদের খবরসহ বিভিন্ন পণ্যের সমাহার ঘটেছে।

প্রসঙ্গত, বৌদ্ধ ধর্মাবলশ্বীদের বিশ্বাস, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্ণবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বুনন, সেলাই ও রঙ করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়। এই কারণেই এই উৎসবকে কঠিন চীবর দান হিসেবে বলা হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh