অর্ডারের ৩০ বছর পর ডেলিভারি, কি এমন খাবার এটা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২২, ০২:৫৯ পিএম

জাপানের জনপ্রিয় খাবার কোবে বিফ রোল। সংগৃহীত ছবি

জাপানের জনপ্রিয় খাবার কোবে বিফ রোল। সংগৃহীত ছবি

ধরুন আপনি অনলাইনে খাবার অর্ডার করলেন। সেই খাবার আপনার কাছে এসে পৌঁছাতে  সময় লাগল ৩০ বছর! তাহলে কেমন লাগবে? 

কিন্তু জাপানের এক ধরনের গরুর মাংসের রোলের এতই চাহিদা যে তা আজ যদি অর্ডার করেন ডেলিভারি পেতে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ বছর। এ বছর যারা ডেলিভারি পাচ্ছেন তারা অর্ডার করেছিলেন ১০ বছর আগে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে সোমবার (১৪ নভেম্বর) এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

খবরে বলা হয়, জাপানের পশ্চিমাঞ্চলে হিয়োগো দ্বীপের তাকাসাগো শহরে ১৯২৬ সালে “আসাহিয়া” নামে একটি গরুর মাংসের দোকান খোলা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই দোকানের মালিকপক্ষই “কোবে বিফ রোল” নামে গরুর মাংসের একটি রোল বানানো শুরু করে। মজাদার এই রোলে গরুর মাংসের সঙ্গে থাকে কড়া ভাজা আলু। ২০০০ সালের পরে ইন্টারনেট জগতে এই রোল হয়ে ওঠে “রোল মডেল”। বাড়তে থাকে ক্রেতার লাইন। সেই সময় এই দোকানের খাবার নিয়ে দেশটির সংবাদ মাধ্যমে প্রচুর খবর প্রকাশিত হয়। তখন থেকেই জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে।

বর্তমানে “আসাহিয়া”র ব্যবসা পরিচালনা করছেন তৃতীয় প্রজন্মের মালিক ৫৮ বছর বয়সী শিগেরু নিত্তা। কিশোর বয়সে বাবার সঙ্গে গরুর মাংস কিনতে স্থানীয় খামারে যেতেন তিনি। এরপর ১৯৯৪ সালে ৩০ বছর বয়সে এই দোকানের দায়িত্ব নেন।

শিগেরু নিত্তা বলেন, “১৯৯৯ সালে প্রথম আমাদের পণ্যগুলো অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়। সে বছরই পরীক্ষামূলকভাবে কড়া ভাজা রোল বিক্রি করি।”

“শুরুতে আমরা কম দামে সুস্বাদু খাবার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই। একেকটি কড়া ভাজা রোল ২৭০ ইয়েনে (১ ডলার ৮০ সেন্ট) বিক্রি করি। যদিও শুধু এক টুকরো মাংসের দাম পড়তো ৪০০ ইয়েন (২ ডলার ৭০ সেন্ট)”, বলেন তিনি।

এই দোকানি বলেন, “প্রথম দিকে লোকসান কমাতে সপ্তাহে ২০০ ‘রোল' তৈরি করা হতো। এখন প্রতিদিন ২০০ ‘রোল' তৈরি করা হয়।”

“২০০০ সালে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এই খাবারের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।”

নিত্তা বলেন, “২০১৬ সালে আমরা রোল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তখন অপেক্ষমাণ তালিকা ১৪ বছরে গিয়ে ঠেকেছিল। আমরা অর্ডার নেওয়াও বন্ধ করে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু, ফোনের পর ফোন আসতে শুরু করে।”

“২০১৭ সালে রোলের দাম বাড়িয়ে আবার অর্ডার নেওয়া শুরু করি”, যোগ করেন তিনি।

নিত্তা বলেন, “সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তাই রোলের দাম বাড়িয়ে ৫০০ ইয়েন (৩ ডলার ৪০ সেন্ট) করেছি। তাতেও লোকসান হচ্ছে।”

মালিকপক্ষ জানায়, “অলাভজনক এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে ৪ ধরনের ‘কোবে বিফ রোল' তৈরি করা হয়। ‘আসাহিয়া'র এই রোলের জন্য বর্তমানে অপেক্ষা করতে হয় ৪ বছর।”

“চলতি বছরে যারা রোলটি সংগ্রহ করছেন তারা ১০ বছর আগে অর্ডার দিয়েছিলেন। আর এই মুহূর্তে যারা অর্ডার করছেন তাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও ৩০ বছর”, যোগ করেন তিনি।

তবে খাবার ও শ্রমের দাম প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও ৩০ বছর এই অলাভজনক ব্যবসা চালিয়ে যাওয়াটা খুবই কষ্টকর বলে মন্তব্য করেন নিত্তা।

তবুও তিনি স্বপ্ন দেখেন আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল “আসাহিয়া”র দোকানটি আরেকটু বড় করে তুলতে। যাতে আগতরা এসে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh