জ্ঞানের সাগর ফকির বাউল সাধক দুর্বিন শাহ

অশোক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০৩:০৫ পিএম | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০৩:৩০ পিএম

দুর্বিন শাহ। ছবি: সংগৃহীত

দুর্বিন শাহ। ছবি: সংগৃহীত

গত ২ নভেম্বর ছিল ফকির বাউল সাধক দুর্বিন শাহের ১০২তম জন্মবার্ষিকী। তিনি বাউল ও সুফি সাধকদের কাছে সমধিক পরিচিত ছিলেন জ্ঞানের সাগর হিসেবে। জ্ঞানের সাগর অভিধানটির পেছনে অবশ্য একটি ঘটনা আছে। ১৯৬৮ সালে বাউল সাধক শাহ আবদুল করিম ও দুর্বিন শাহ একত্রে বিলেত সফরে গিয়েছিলেন।

তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বিলেত প্রবাসী বাঙালিরা। সেই সফরে তারা গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের আপ্লুত করেছিলেন তো বটে, তাদের গান রচনার ধরন ও গায়কীতে বিলেতের বাঙালিরা এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, শাহ আবদুল করিমকে তারা উপাধি দিয়েছিলেন ‘রসের সাগর’ এবং দুর্বিন শাহকে দিয়েছিলেন ‘জ্ঞানের সাগর’ উপাধি। 

বাঙালির মূল চেতনাকে ধারণ করতে হলে ফকির, বাউল তথা লোকগীতির সাধকদের চেতনাকে হৃদয়ে লালন ও সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই; কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- এই সাধকদের চেতনাকে সেই অর্থে ছড়িয়ে দেওয়ার কোনো প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয় না।

দুর্বিন শাহের অধিকাংশ গানে যদিও সুফি ও মরমীবাদ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, এসব গানের বাইরে তিনি বিচ্ছেদ, আঞ্চলিক, গণসংগীত, মালজোড়া, জারি, সারি, ভাটিয়ালি, গোষ্ঠ, মিলন, রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলী, হামদ-নাত, মারফতি, পীর-মুর্শিদ স্মরণ, আল্লাহ স্মরণ, নবী স্মরণ, ওলি স্মরণ, ভক্তিগীতি, মনঃশিক্ষা, সুফিতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, কামতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, পারঘাটাতত্ত্ব, দেশের গানসহ ভিন্ন ঘরানার অসংখ্য গান লিখেছেন। 

দুর্বিন শাহের রচিত ‘নমাজ আমার হইল না আদায়’ শিরোনামের গানটি ১৯৭৪ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক তার ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়া বন্ধু যদি হইতো নদীর জল, বন্ধু আইয়ো আইয়ো আমার বাড়ি, নির্জন যমুনার কোলে বাজায় বাঁশি বন্ধু শ্যাম রায়, আমি জন্মে জন্মে অপরাধী তোমারই চরণে রে, তোমার মতো দরদী কেউ নাই, ছাড়িয়া যাইও না বন্ধু রে, অটোমেটিক কলের মেশিন এই দেহ সভায়, মারিয়া ভুজঙ্গ তীরসহ লোকমুখে প্রচলিত অসংখ্য গানের রচয়িতা মরমী সাধক দুর্বিন শাহ। 

সিলেটসহ সারাদেশে একসময় তিনি বাউল গান পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়েছিলেন তা-ই শুধু নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য জাগরণমূলক গান পরিবেশন করে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন। অথচ তার মৃত্যুর দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হলেও রাষ্ট্র থেকে তার অবদানকে যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়নি। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh