অভিজিৎ অশোক
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৫০ এএম
বব ডিলান। ছবি: সংগৃহীত
গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সংগীত পরিচালক, চিত্রশিল্পী, লেখক ও সংগীতজ্ঞ বব ডিলানের মাথায় বোধকরি একটু পাগলামিই ছিল! না হলে বিশ্বের অসংখ্য সংগীতশিল্পী ও মানবতাবাদীর প্রেরণার উৎস এবং নিজের অজান্তে কবি থেকে যাওয়া মানুষটি অল্প বয়সেই বাইবেল থেকে র্যাবো, বোদলেয়ার থেকে হুইটম্যান; এমনকি এক সময় অ্যালেন গিন্সবার্গ দ্বারা কেন উদ্বুদ্ধ হবেন! এদিকে তার ডিলান নামটি আবার ওয়েলসের কবি ডিলান টমাসের নামটি থেকে কিনা ধারণ করা!
রবার্ট জিমারম্যান তথা বব ডিলানের জন্ম ১৯৪১ সালে। শিল্প-সাহিত্যের অন্যান্য শাখার ইতিহাসের চেয়ে পুরনো ও সমৃদ্ধ মাধ্যম সংগীতে পার করেছেন ৫৫ বছর। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় বৈপরীত্যেই হাঁটা আর এই দীর্ঘ সময়ে ছয়টি বই, ৬৫০টির মতো গান ও ৭০টি অ্যালবাম মুক্তি দেওয়া ডিলানের লোকসংগীতের প্রতি ছিল আজন্ম অনুরাগ; কিন্তু তা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে।
ব্যতিক্রম ও সাধারণ্যে অসাধারণ জীবনের অধিকারী ডিলান বলতেন, ‘কোনো আইন বা নিয়ম ছাড়া বাঁচতে হলে আপনাকে সৎ হতে হবে।’
১৯৬৫ সালে নিউপোর্ট ফোক ফেস্টিভ্যালের আসরে ঐতিহ্যবাহী আমেরিকান ফোক ইনস্ট্রুমেন্ট সহযোগে গান করার বদলে তিনি ইলেক্ট্রিক গিটার হাতে মঞ্চে উঠে গান করেছিলেন। এর কারণে তাকে শুধু টিপ্পনীই কাটা হয়নি, কেউ কেউ পারলে মঞ্চ থেকে তাকে নামিয়েই দিচ্ছিলেন; কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো- ২৪ বছরের তরুণটি সেদিন তার সংগীত পরিবেশনায় অটল তো ছিলেনই, সেই সব দেখেও যেন দেখছিলেন না।
কেউ সেদিন কি আন্দাজ করতে পেরেছিল, সেই ফেস্টিভ্যালের আসরে টিপ্পনী সয়ে দেখেও না দেখা যুবকটিই পরবর্তী ছয় দশকে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বের সংগীত রুচিতে ভিন্ন ধারার সংযোজন ঘটিয়ে তার গানে বুঁদ করে রাখবেন লক্ষ-কোটি মুক্তিকামী মানুষকে!
নবীনদের উদ্দেশ করে তিনি বলেছেন, ‘যখন কারও গান ভালো লাগে তখন ওই ব্যক্তির প্রেক্ষাপটের মতোই নিজের প্রেক্ষাপটে উন্মুক্ত হতে হয়। আর যদি কেউ গান লিখতে চায় তবে তাকে অবশ্যই বেশি বেশি লোকসংগীত শুনতে হবে।’
আড়াই হাজার বছর আগের হোমার, ভার্জিল কিংবা স্যাফোদের গীতিকবিতা মানুষের মুখে মুখে ফিরত, মানুষ কণ্ঠে ধারণ করে উচ্চারণ করত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিউইয়র্কে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এ অংশ নেওয়া ডিলান যুদ্ধবিরোধী সংগীত হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘ব্লোয়িং ইন দি উইন্ড’ এবং ‘দি টাইম দে আর আ চেইঞ্জিং’-এর কবি।
সারা দুনিয়ার মানুষের মুখে মুখে তার গান শুধু ফেরে না, ডিলান তার সৃষ্টি দ্বারা রাজনীতি, সমাজ, দর্শন, সাহিত্যকে দারুণভাবে প্রভাবান্বিত করেছেন; কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো- ২০১৬ সালে তিনি যখন নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন, তখন একজন গীতিকবি পুরস্কারটিতে ভূষিত হওয়ায় বিশ্ববাসী যেন চমকে উঠেছিল। নির্লিপ্ত ও নির্লোভী ডিলানের নোবেল পুরস্কারের প্রতি মোহ ছিল কিনা- তা আমাদের জানা নেই।