আমাদের কাজ ছিল সৎ চিন্তা, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে গল্পটি তুলে ধরা

এহসান হায়দার

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ১০:৪৬ এএম

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকানির্ভর ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্রটি নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউমের প্রথম চলচ্চিত্র, হয়তোবা শেষ চলচ্চিত্রও। কারণ এই চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর জন্য তিনি কোনো হল পাচ্ছিলেন না।

গত ২৯ অক্টোবর এর প্রিমিয়ার শো হলেও এর ব্যবসায়িক সাফল্য নিয়ে শঙ্কা থেকে এর পর কোনো প্রেক্ষাগৃহ আগ্রহী হচ্ছিল না প্রদর্শনে। পুঁজিবাদের দুনিয়ায় সিনেমা কেন, সমস্ত কিছুই চাকচিক্যময় হওয়া চাই। বিকল্পধারার চলচ্চিত্র প্রচলিত ব্যবসাসফল শব্দটির সঙ্গে খুব বেশি যায় বলে মনে হয় না।

চাকচিক্যহীন এবং রূঢ় বাস্তবতার সত্য চিত্রায়ণ চলবে কী? হয়তো তথাকথিত ‘গ্ল্যামারাস’ অভিনেতা বা অভিনেত্রীও নেই, শহুরে জীবনের গল্পও নয়- প্রান্তিক মানুষের জন্য কি ভালোবাসা দেখায় মানুষ? তার ওপর হাওর, সেটা শুধু লোক দেখানোর জন্য এবং নিজেকে বিনোদিত করার জন্য বলা চলে বাস্তবে নয়।

চলচ্চিত্রটি শেষাবধি হলেও জায়গা পেতে শুরু করেছে, আলো আসছে ক্রমে- একথা বলা চলে। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা মুহাম্মদ কাইউমের সঙ্গে সাম্প্রতিক চলচ্চিত্রবাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছেন- এহসান হায়দার

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্রকে বলা হচ্ছে বিকল্পধারার একটি চলচ্চিত্র, কেন এটাকে আমরা বিকল্পধারার চলচ্চিত্র বলবো- বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত বলবেন কী?

সিনেমা তৈরির এফডিসি কেন্দ্রিক যে ধারা এদেশে প্রচলিত ছিল বা এখনো রয়েছে, তার অধিকাংশেরই মূল উদ্দেশ্য ব্যবসা করা বা মুনাফা অর্জন করা। তাই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের লগ্নীকৃত টাকা মুনাফাসহ ফেরত আনার জন্য অথবা সিনেমা হল মালিকদের প্রচুরে টিকিট বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট ছকে কিছু আইটেম নাচ-গান, ভায়োলেন্স ইত্যাদি যুক্ত করে দর্শকদের সস্তা বিনোদনের জগতে আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়।

এখানে সিনেমার বিষয়, উপস্থাপনার সাহিত্যমূল্য বা শৈল্পিক প্রকাশ মুখ্য নয়, মুনাফা অর্জনই মূল লক্ষ্য। এই কাঠামোর বাইরে যারা চলচ্চিত্রকে শুধু মুনাফা অর্জনের হাতিয়ার নয়, একটি শিল্প মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন; এদেশের মানুষের জীবন ও সমাজের কথা চলচ্চিত্রের বিষয় হিসেবে সৃষ্টিশীলভাবে উপস্থাপনা করতে চান, তাদের জন্য কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অর্থলগ্নী করতে এগিয়ে আসেন না।

ফলে তাদের বিকল্প পন্থায় স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন করতে হয়। এই ধারাটিই বিকল্প ধারা। 

হাওরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ চলচ্চিত্রের গল্প, কতটা সার্থক চলচ্চিত্র হয়েছে বলে মনে করছেন?

এটা তো দর্শক, সমালোচক যারা দেখছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমাদের কাজ ছিল সৎ চিন্তা, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে গল্পটি তুলে ধরা; আমরা সেটা করেছি। কতটুকু সার্থক হয়েছি তা বিচারের ভার তাদেরই বলে মনে করি।

আপনার চলচ্চিত্র ভাবনায় মানুষের জন্য চলচ্চিত্র কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

আমার বিবেচনায় সৎ উদ্দেশ্য, মানবিক চিন্তা, সহমর্মিতাপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখে মানুষের জীবনের স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, সমাজে বিদ্যমান সংকট ও বৈচিত্র্যকে শৈল্পিক আঙ্গিকে তুলে ধরাই চলচ্চিত্রের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।

এদেশে অনেকদিন ধরে সুস্থধারার চলচ্চিত্র হচ্ছে না, দর্শক আসছে না হলে আবার হলগুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এফডিসিমুখী চলচ্চিত্রও মানসম্পন্ন হচ্ছে না; সেখানে আপনার বানানো চলচ্চিত্রটি আশানুরূপভাবে হল বরাদ্দ পায়নি- বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন আপনি?

স্বাধীনতার পর থেকে এদেশের শাসকশ্রেণি পরিকল্পিত ও ধারাবাহিকভাবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির যে অধপতন ঘটিয়েছে তারই ফলে সুস্থধারার চলচ্চিত্র যেমন তৈরি হচ্ছে না, তেমন রুচিশীল দর্শকও বিকশিত হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে হল মালিকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, কারণ পর্যাপ্তসংখ্যক দর্শক না এলে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এসব হল বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য।

সেজন্য সরকারি উদ্যোগে একদিকে যেমন শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়ে জনরুচির মান বৃদ্ধি ঘটাতে হবে, অন্যদিকে সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন ও প্রদর্শনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রকেন্দ্র গঠন ও প্রদর্শনের জন্য সিনেমা হল নির্মাণ করতে হবে।  

আপনার চলচ্চিত্র সঙ্গীদের আর কারও কথা বলবেন কী- যারা এ চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করেছেন, যারা এটার পেছনের চিন্তাকে আপনার মতো লালন করছেন?

আমার সাথে যারা কাজ করেছেন, সকলেই চলচ্চিত্রকে একটি শিল্পমাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ ছিলেন। অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলী- সকলেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্যই সুষ্ঠুভাবে কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh