১৯৩৮ দ্বিতীয় আসর: ইতালির টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ১১:৪৫ এএম
১৯৩৮ দ্বিতীয় আসরে বিশ্বজয়ী ইতালি দলের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ডামাডোলের মধ্যেই নানা বিতর্কিত ঘটনার মধ্যদিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের তৃতীয় আসর অনুষ্ঠিত হয় ফ্রান্সে। প্রথমবার আয়োজক হয়েও শিরোপা জিততে পারেনি দেশটি। টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে দারুণ এক অর্জন করে বসে আজ্জুরিরা।
বিশেষ করে প্রথম আসরের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা শত চেষ্টা করেও আয়োজক হতে না পেরে বিশ্বকাপে খেলবে না বলে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়। প্রতিবেশি দেশ উরুগুয়েও হাটে আর্জেন্টিনার দেখানো পথেই। এরপর মেক্সিকোও শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সুযোগ ঘটে ক্যারিবিয় অঞ্চলের কিউবার। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর দেশটি এরপর আর কখনোই বিশ্বসেরা আসরে খেলতে পারেনি। এছাড়া গৃহযুদ্ধের কারণে ইউরোপের দেশ স্পেনও অংশ নেয়নি। হিটলারের দেশ জার্মানি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অষ্ট্রিয়া দখলে নিলে সব খেলোয়াড়ও তাদের হয়ে যায়। দলটির সবচেয়ে বড় তারকা ম্যাথিয়াস সিন্ডলার জার্মানির হয়ে খেলতে অপারগতা প্রকাশ করার পর তার লাশ পাওয়া যায়।
তবে সে সময় প্রচার করা হয়েছিল তিনি নাকি আত্মহত্যা করেছেন। বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে এসে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সুযোগ পায় ইন্দোনেশিয়া। তবে তারা ডাচ ইন্ডিজ নামে অংশ নিয়েছিল। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালি ও স্বাগতিক ফ্রান্স সরাসরি আর ৩৬টি দল থেকে ১৩টি আসে বাছাইপর্ব খেলে। ব্রাজিল ৬-৫ গোলে পোল্যান্ডকে, হাঙ্গেরি ৬-০ গোলে ডাচ ইন্ডিজকে এবং সুইডেন ৮-০ গোলে কিউবাকে পরাজিত করে। গোলরক্ষকরা কতটা অসহায় ছিলেন সেটা গোলের পরিসংখ্যানে যথেষ্ট। আসরের ১৮টি ম্যাচের ৮টিতেই গোল হয়েছে কমপক্ষে ৬টি করে। বলা যায় যোগ্যতম দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ফাইনালে হাঙ্গেরিকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে নান্দনিক আর শৈল্পিক খেলা দিয়ে। আগের আসরের মতো এতটা রক্ষণাত্মক খেলা তারা খেলেনি।
তবে আসরের আলোচিত দল বলা যেতে পারে ব্রাজিলকে। দুর্দান্ত খেলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়ে গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে সেমিফাইনাল পর্যন্ত দারুণ খেলে। ৫ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ১৪ গোল দিয়ে শিরোপার অন্যতম দাবিদারও হয়ে যায় তারা। দারুণ সব পাস আর দর্শনীয় ফুটবল দিয়ে নিজেদের প্রতিটা ম্যাচেই প্রমাণ করে থাকে। কোচ আসরে ৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া লিউনিডাকে সেমিফাইনালে বসিয়ে রেখে ম্যাচ হেরে যায়। এছাড়া অন্য তারকাদের পূর্ণ বিশ্রামে দেওয়ার কারণে সুযোগটা এসে যায় ইতালির সামনে। তারা সেই সুযোগে ২-১ গোলে জিতে ফাইনালে জায়গা করে নেয়। এরপর তো শিরোপাই জিতে নেয়। এতটা ঘটনার বিশ্বকাপ আর কখনোই অনুষ্ঠিত হয়নি। যা সে সময়ের অনেকের মানসপটে ভেসে ওঠে।
এক নজরে তৃতীয় আসর
স্বাগতিক : ফ্রান্স
চ্যাম্পিয়ন : ইতালি (টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়)
রানার্সআপ : হাঙ্গেরি
সময়কাল : ৪-১৯ জুন ১৯৩৮
অংশগ্রহণকারী দলসমূহ : মোট ১৫টি দল (ইতালি, নরওয়ে, ব্রাজিল, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, নেদারল্যান্ড,হাঙ্গেরি, ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন, কিউবার ও রোমানিয়া) মোট ভেন্যু : ১০টি (১০ শহরে)
মোট ম্যাচ : ১৮ টি
মোট গোল : ৮৪ টি (ম্যাচ প্রতি ৪.৬৭)
সর্বোচ্চ গোলদাতা : লিউনিডাস (চেকোস্লোভাকিয়া) ৭টি
মোট দর্শক উপস্থিতি : ৩৬৯৭২০ (ম্যাচ প্রতি গড়ে ২০৫৪০)