ভালো নেই চাঁদপুরের জেলেরা

চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৩:২১ পিএম

এখনো মৌলিক চাহিদাবঞ্চিত রয়েছে অনেক জেলে পরিবার। ছবি: প্রতিনিধি

এখনো মৌলিক চাহিদাবঞ্চিত রয়েছে অনেক জেলে পরিবার। ছবি: প্রতিনিধি

চাঁদপুর নামের সঙ্গে অবধারিতভাবে চলে আসে রুপালি ইলিশের কথা। পৃথিবী বিখ্যাত এ মাছ চাঁদপুরের নদীগুলোতেই সবচেয়ে সুস্বাদু হয়। ফলে চাঁদপুরের মিঠা পানির ইলিশ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও পরিচিতি লাভ করেছে।

তাই ইলিশ ঘিরে ব্র্যান্ডিং জেলা চাঁদপুর এখন ইলিশের বাড়ি। চার নদীর আর্শীবাদপুষ্ট এ জেলার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজ এবং নদীতে মাছ আহরণ করেই জীবিকানির্বাহ করে থাকেন। বর্তমানে চাঁদপুরে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩৫ জন।

যাদের কাছে রুপালি ইলিশ সর্বোচ্চ আরাধনার জলজসম্পদ। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশ তথা পৃথিবী এগিয়ে গেলেও ইলিশ আহরণে জড়িত চাঁদপুরের জেলেদের জীবনমান তেমন উন্নয়ন হয়নি। এখনো মৌলিক চাহিদাবঞ্চিত রয়েছে অনেক জেলে পরিবার। একই সাথে ছিন্নমূল রয়েছে শত শত পরিবার।

খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয় এই জনগোষ্ঠীর। জেলের সন্তানরা জেলে হয়ে বেড়ে উঠছে এখনো। পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষাঅধিকার থেকেও। তা ছাড়া নদীভাঙনের সাথে তাদের লড়াই যেন বংশপরম্পরায় পাওয়া দৃশ্যমান এক দুর্ভাগ্য। নদীভাঙনের শিকার বহু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে সেচ প্রকল্পের বাঁধের (বেড়িবাঁধ) দুই পাশে এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পে।

সম্প্রতি পদ্মা-মেঘনা উপকূলীয় চাঁদপুরের জেলেপল্লীগুলো ঘুরে এবং জেলে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদের জীবনধারণের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এমন তথ্য উঠে আসে।

কথা হয় সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের এমনই এক জেলে আলমগীর হোসেনের (৪৮) সাথে। শিশু বয়সেই নদীতে মাছ ধরার কাজ শুরু করেন তিনি। ৩৮ বছর ধরে রয়েছেন একই পেশায়।

এ দীর্ঘ সময়ে নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন বহুবার। বর্তমানে সমিতি থেকে টাকা ঋণ নিয়ে ঘর তুলেছেন অন্যের জায়গায়। ২ সন্তানের জনক আলমগীর বলেন, আগের তুলনায় এখন ইলিশ মাছ খুব কম পাওয়া যায়। আগে কারেন্টজাল ছিল না। তখন বড় সাইজের ইলিশ ছিল। কারেন্টজাল আসার পর থেকে ইলিশের আমদানি অনেক কমে গেছে। যে কারণে সংসার চালানো অনেক কষ্ট হয়। ছোট ফাঁসের কারেন্টজাল উৎপাদন বন্ধ করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জেলে জাহাঙ্গীর গাজী থাকেন রাস্তার পাশের ছোট একটি ঘরে। তিনি জানান, ৪০ বছর মাছ ধরছেন; কিন্তু ভাগ্যের পরাবর্তন হয়নি। দুই ছেলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। টাকার অভাবে পড়াতে পারেননি। এখন নদীতে মাছ ধরার কাজ করে।

গত বছর বৃদ্ধ মা চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালে মারা গেছেন। তাদের কষ্টের কথা কেউ শুনতে আসে না। সরকারি সহায়তা বলতে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময় সামান্য চাল। তা ও আবার সঠিক ওজনে দেওয়া হয় না।

এ ছাড়া সদর উপজেলার রনাগোয়াল, দোকানঘর, বহরিয়া, গোবিন্দিয়া, আখনের হাটসহ বেশ কয়েকটি জেলেপল্লীর জেলেরা জানান, চাঁদপুরের নদীতে ইলিশ একেবারেই কম। ইলিশ আহরণের ওপর নির্ভর করে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া এনজিও এবং সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বেকায়দায় আছেন তারা।

নদীতে ইলিশ না পাওয়ার কারণে ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। যার কারণে অনেকেই দাদনের মাধ্যমে সাগরে মাছ ধরতে চলে যান। কেউ কেউ কৃষিকাজ, অটো-রিকশা চালানোসহ অন্য পেশায় জড়িত হচ্ছেন।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য ও বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার বলেন, নদীতে পানি কম, পদ্মা-মেঘনায় ডুবোচর, নদীর তলদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে রুপালি ইলিশের প্রাপ্যতা অনেকগুণ কমেছে। জেলে নেতা তছলীম বেপারি বলেন, চাঁদপুরের জেলেদের অবস্থা আগের মতো নেই। নানা কারণেই চাঁদপুরের নদীতে ইলিশ কমছে। জেলেরা দিন-রাত নদী চষে বেড়ালেও জ্বালানি খরচ উঠছে না।

চঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জেলে পরিবারগুলোতে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাদের শুধু ইলিশ আহরণের ওপর নির্ভরশীল না থেকে অন্য কাজ করার জন্য স্থানীয়ভাবে সভা করে সচেতন করা হচ্ছে। মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের গবাদিপশু, ছাগল, সেলাই মেশিন ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু জেলেদের নেশা হচ্ছে মাছ ধরা। সেখান থেকে ফিরে আসতে পারে না। তবে এখন মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh