গোয়েন্দা জালে সারা দেশ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২২, ১১:১৫ পিএম

দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা। সংগৃহীত ছবি

দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা। সংগৃহীত ছবি

আদালত পাড়া থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সারা দেশে জাল ছড়িয়েছে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা ইউনিটগুলো। পুলিশ সদর দফতর থেকে দেশব্যাপী রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

দেশের সব পুলিশ ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। জঙ্গিরা যাতে রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ইতোমধ্যে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সব ইউনিট, বিভাগীয় ইউনিট, ক্রাইম ইউনিট ও সিটিটিসিসহ সবাইকে অভিযান চালাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমান ও স্থলবন্দরগুলোকেও সতর্ক করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, তাঁতিবাজার মোড়, শাহবাগ, কাওরান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, নীলক্ষেত এলাকার মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চৌকি বাসানো হয়েছে। এছাড়া রামপুরা, মহাখালী, উত্তরা, বিমানবন্দর ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

পান্থপথ সিগন্যালে তল্লাশি চালানো অবস্থায় পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই ঘটনার পর থেকেই সতর্ক অবস্থানে আছি আমরা। এ পথে চলাচলকারী প্রতিটি গাড়িতে নজরদারি করা হচ্ছে। নিরাপত্তায় কোনও ঘাটতি নেই। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই তল্লাশি কার্যক্রম চলবে।’

৪০টি টিম নির্দিষ্ট এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে বলে ডিএমপি মতিঝিল বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি বিভাগের পক্ষ থেকে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। রাজধানীর প্রতিটি থানা ও অন্যান্য ইউনিটকে তল্লাশি চৌকি বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সারা দেশের আদালতগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। দেশের সব কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে কারা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে।

সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান, সিটিটিসির ১০টি ইউনিট মাঠে কাজ করছে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সতর্ক অবস্থানে আছে সিআইডির সব ইউনিট। ইতোমধ্যে তারাও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে।’

নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার (অপারেশন্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) ড. আ. ক. ম. আকতারুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, ‘দেশের নৌপথে যত লঞ্চ ঘাট, ফেরিঘাট আছে, প্রতিটি ঘাটেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সব ঘাট সিসিটিভির আওতায় রয়েছে। সেগুলো মনিটারিং করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘাটে ডিউটি কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নৌপথ ব্যবহার করে জঙ্গিদের পালিয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নাই। এ ঘটনার পর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নৌপথ ব্যবহার করার কোনও সুযোগ থাকলে—সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি। রাতের বেলা নদীপথে চলাচলকারী প্রত্যেকটি বোট বা নৌযানকে নজরদারির আওতায় আনা হবে। বিশেষ করে স্পিডবোর্ড নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আদালত পাড়া থেকে ছিনতাই হওয়া জঙ্গিদের গ্রেফতার করতে ইতোমধ্যে সব সংস্থার ব্যাটালিয়নকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সব ইউনিট ওই ঘটনা নিয়ে কাজ করছে।’ পলাতক দুই জঙ্গিকে খুব দ্রুত গ্রেফতারে র‌্যাব আশাবাদী বলে জানান তিনি।

বিজিবি’র পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে যেকোনও অবৈধ অনুপ্রবেশ ও বহির্গমন প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা সতর্ক। তবে জঙ্গি বিষয়ে আমরা অবগত আছি এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

ইমিগ্রেশন পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দেশের প্রতিটি বিমানবন্দরে ল্যান্ডফোর্স ও এয়ারফোর্সকে সতর্কতামূলক বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছি। এমন সন্দেহভাজন কাউকে পেলেই গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর দিয়ে তাদের পার হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২০১৬ সালে এই জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। রবিবার আদালত থেকে কোর্ট হাজতে নেওয়ার পথে সহযোগীরা পুলিশকে আহত করে তাদের ছিনিয়ে নেয়। এরপর থেকে সিটিটিসিসহ সারা দেশের পুলিশ তাদের গ্রেফতারে কাজ শুরু করেছে। যারা পালিয়েছে, যারা তাদের ছিনিয়ে নিয়েছে—তাদের সবাইকে খুব দ্রুত সময়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে পুলিশ।’

আদালত পাড়ায় পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে দুই আসামি জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি রবিবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় কমিশনার বলেন, ‘পলাতক দুই জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে।’

আদালত সূত্র জানায়, রবিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সাত সদস্যকে ঢাকায় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশের চোখে স্প্রে করে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিরা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh