গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে অনিয়মের অভিযোগে অনিশ্চিত ঠিকাদার নিয়োগ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১৮ এএম

গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ওষুধসহ ছয়টি গ্রুপের বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের (এমএসআর সামগ্রী) ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্তে বিভিন্ন অনিয়মের মিথ্যা অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম। ফলে ওষুধসহ এমএসআর সামগ্রী পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে এ জেলার ২৬ লাখ মানুষ। এমন আশঙ্কা করছে সচেতনমহল। তারা বলছেন, আদালত যদি সদয় হন তবেই পাবে নানা বয়সের অসুস্থ মানুষগুলো ওষধসহ এমএসআর সামগ্রী। 

গত ৩ অক্টোবর গাইবান্ধার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে এই মামলাটি করেন জেনারেল হাসপাতাল রোডস্থ ফকির পাড়া এলাকার ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আফরোজা ইসলাম। এই মামলায় পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়েছে। তারা হলেন- গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক (অর্থ), সহকারী পরিচালক (অর্থ) ও হাসপাতালটির আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও)। 

হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, প্রতি বছরের মতো ২০২২-২৩ অর্থবছরে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের জন্য ছয়টি গ্রুপে এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ের নিমিত্তে গণখাতে সংগ্রহ বিধিমালা ২০০৮, ২০০৯ (সংশোধিত), ২০১০ (সংশোধিত) ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬, ২০০৯ (সংশোধিত), ২০১০ (সংশোধিত), ২০১৬ (সংশোধিত) মতে চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। গ্রুপ ছয়টি হলো- ঔষধ (ইডিসিএল বর্হিভূত), লিনেন সামগ্রী, যন্ত্রপাতি, গজ-ব্যান্ডেজ-তুলা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আসবাবপত্র। 

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তৎকালীন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. এসএম তানভির রহমান জানান, মামলার বাদী সিডিউল কিনলেও অত্র কার্যালয়ে দাখিল করেননি। এ ছাড়া দরপত্রে উল্লেখিত ১৬ নম্বর ক্রমিকের প্রাক-দরপত্র সভায় তারা উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি তাদের পক্ষেও কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

সেক্ষেত্রে মামলার বাদীর অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। তবে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যুক্তিসঙ্গত জবাব দাখিল করেছে বিবাদীগণ। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ২৬ লাখ মানুষের কথা চিন্তা করে দ্রুত সমাধান দেবেন- এমন প্রত্যাশা করেন তিনি । তিনি আরও বলেন, আগের ঠিকাদারদের সরবরাহকৃত ওষুধসহ এমএসআর সামগ্রী আগামী দুদিনের মধ্য শেষ হবে। এর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওষুধসহ এমএসআর সামগ্রী রোগীদের বিতরণ করতে পারবে না।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি ডা. মাহবুব হোসেন বলেন, দরপত্রের শর্তাবলীর মধ্যে অন্যতম ৮-এর (ছ) পরিবর্তন করার অভিযোগ তুলে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শর্ত মতে ৮(ছ) মতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বাদীগণ অংশগ্রহণ করেননি। ফলে বাদীগণের মামলা দায়ের করার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। জেনারেল হাসপাতালে এমএসআর মালামাল সরবরাহের জন্য জেলা হাসপাতাল বা অন্য হাসপাতালের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বাধ্যতামূলক।

গত বছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ বেশি হওয়ায় যাহা পিপিএ/২০০৬, পিপিআর/২০০৮ ধারা ৪৯ (অ)৪৮, ২(ঊ) মতে ৮(ছ) নম্বর ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০২২-২৩ অর্থবছরের এমএসআর দরপত্রের শর্তাবলীর ৮(ছ) সঠিক হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, মামলার বাদীগণের জেনারেল হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমএসআর মালামাল সরবরাহের আগের কোনো অভিজ্ঞতার সনদ নেই। সেক্ষেত্রে ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে পরামর্শ করে যোগসাজশে দরপত্র আহ্বান করেনি। তবে প্রশাসনিক নিয়মে উক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

এ ছাড়া দুটি কমিটির মাধ্যমে দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ এককভাবে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। ফলে বাদীগণের আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে বানোয়াট এবং সরকারি ক্রয়কার্যে বাধা প্রদানের সামিল বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh