ইমানুল সোহান, ইবি
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২২, ১০:০৩ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বেলুন উড়িয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা। ছবি: ইবি প্রতিনিধি
ছেলেদের পরনে বাহারি রংয়ের পাঞ্জাবি আর মেয়েদের কপালে লাল টিপ ও পরনে লাল রংয়ের শাড়ি। চারদিকে রঙিন পতাকা, লাল ও নীল ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ছুটে চলা। কারও মাথায় বাহারি ক্যাপ, কারও হাতে ঢোল ও তবলা। কেনই বা হবে না। ভালোবাসা, আবেগ ও অনুভূতির ১৭৫ একরের জন্মদিন যে আজ। তাইতো নবরূপে সেজেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সেই সাথে সেজেছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও। আজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
বছরের এই দিনটির জন্য ১৭৫ একরের ১৬ হাজার শিক্ষার্থী অপেক্ষায় থাকে। সেই সাথে অপেক্ষায় থাকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। দিনের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা রুচিসম্মত পোশাক পরে নিজ বিভাগে উপস্থিত। গন্তব্য বিভাগের হয়ে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা।
সকল বিভাগ, আবাসিক হল, প্রশাসন, প্রকৌশল অফিস, জনসংযোগ অফিস, পরিবহন অফিসসহ নিজস্ব ব্যানারে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। সকলে একত্রিত হলে আলোর মিছিলে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। শোভাযাত্রায় ঢোল ও তবলার তালে চলে জন্মদিনের স্লোগান। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনের শুরুতেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আলী হাসান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের পাদদেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই স্থানে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন বিভাগ-অফিস, আবাসিক হলের শিক্ষার্থীর অংশ নেয়। র্যালিটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বাংলা মঞ্চে এসে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মিলিত হয়। এসময় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া ও রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আলী হাসান প্রমুখ।
৪৩ বছরের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
আজ ৪৩ বছর পেরিয়ে ৪৪ বছরে পা দিয়েছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৪৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্তির ঝুড়ি অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে। স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। চরম সংকটাপন্ন অবস্থা মোকাবেলা করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই। এর মধ্যে পার হয়েছে ১২ জন উপাচার্য।
বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীন ৩৬টি বিভাগে চলছে পাঠদান। বাংলা বিভাগের আওতায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’। যেখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তর পঠন, পাঠন ও গবেষণা চলবে। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নির্মাণ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। যা দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম বঙ্গবন্ধু মুর্যাল। মুক্তিযুদ্ধের উপর বিস্তর জ্ঞান অর্জনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এছাড়াও সেশনজটের গ্লানি থেকে মুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়াও ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। এর আওতায় নির্মিত হচ্ছে ৯টি দশতলা ভবন। তৈরি হয়েছে একটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার। ওই মেগা প্রকল্পের অধীনে কিছু ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে।
আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে অর্ধশতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাশ হয়েছে অর্গানোগ্রাম। এত প্রাপ্তির মাঝেও কিছু অপ্রাপ্তির কথাও আছে। আবাসন সংকট এর মধ্যে অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। তবে মোট আটটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থী বাস করছেন প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে ছাত্রদের পাঁচটি আর ছাত্রীদের তিনটি।
আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও তা আজও সম্ভব হয়নি। ফলে পরিবহন নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। বছর বছর শিক্ষার্থী বাড়লেও আবাসিক হলের অপর্যাপ্ত রয়েই যাচ্ছে। যার কারণে প্রত্যেক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ব্যয়ের দশ শতাংশ গুনতে হয় পরিবহনের পেছনে। এছাড়াও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজ, অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতিসহ বেশকিছু বিষয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়াও যোগ হয়েছে শিক্ষক রাজনীতি। যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপরে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ আবাসিক হবে। গবেষণাকাজে প্রশাসন তাদের মানসিক ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবে। একইসাথে দুই অঞ্চলের গণ্ডি পেরিয়ে ছাত্র রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়া।’
এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা প্রতীয়মান। এগুলো সবাই মিলে সমাধান করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হলে আমাদের আবাসিক সুবিধে বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয় সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আরো বেশি মনোনিবেশ করবে আশা করি।’