আলোচিত জেএমবি সোহেলের বাড়িতে শুনশান নিরবতা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৭:০৯ পিএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৭:১২ পিএম

জেএমবি সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাহাবের বাড়ি। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

জেএমবি সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাহাবের বাড়ি। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালত থেকে পালানো আলোচিত জেএমবি সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাহাবের বাড়ি  লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের ভেটেশ্বর গ্রামে। সোহেল ওই গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সোহেল তৃতীয়। 

আজ বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে একমাত্র কেয়ার টেকার ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িটিতে শুনশান নিরবতা। বাড়ির কেয়ারটেকার সাইফুল ইসলাম বলেন, গত ১৪ দিন আগে আবু তাহের ও তার স্ত্রী বাড়িতে এসে মাত্র দুইদিন অবস্থান করে চলে যায়। কোথায় গেছেন তা জানি না। এরপর আর বাড়িতে কেউ আসেনি। 

এসময় স্থানীয়রা জানান, ১০ বছর আগে যে পরিবার ছিল অভাবগ্রস্ত। ভিটে মাটি ও দুই চালা টিনের ঘর ছিল একমাত্র সম্বল। যাদের সংসার চলতো কষ্টে। আজ তারা কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। প্রায় এক একর যায়গা জুড়ে গড়েছেন পাকা বাড়ি। এছাড়া আবাদি জমি রয়েছে (২৬ বিঘা) প্রায় ৭ একর। সোহেলের বাবা আবু তাহের এখন করেন আভিজাত্য জীবন যাপন।

এদিকে আবু তাহেরের ছেলে একজন জেএমবি সদস্য এবং আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা আদিতমারী উপজেলাসহ ওই এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজারে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 

জানা গেছে, সোহেলের বাবা আবু তাহের এলাকায় তাহের নেতা নামে পরিচিত। সোহেলের বড় ভাই আবু সাঈদ ঢাকায় টিউশনি করান। দুই নম্বর ভাই জেল খাটা আসামি আব্দুস সাত্তার শাহীন গাজীপুরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন। বোন শিরিন আক্তারের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়। সোহেল ভাইদের মধ্যে ছোট। 

সোহেলের শৈশব ও স্কুলজীবন কেটেছে আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীরহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। আদিতমারী ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর পাড়ি জমান ঢাকায়। তার ১০ বছর বয়সের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই সোহেল ছিল চাপা স্বভাবের। কারো সাথে তেমন মিশতো না। কথাও কম বলতো। আজ সেই শান্ত ছেলেটি জেএমবি সদস্য এবং পুলিশের হাত থেকে পালিয়েছে, এটা যেন মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসী।

এ ব্যাপারে স্থানীয় কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি জানান, আমরা দেখেছি, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। ৪ বছর আগ থেকে দেখছি তারা বেশ অর্থশালী হয়ে গেছে। সোহেলের বাবা তাহের এলাকায় বিচার আচার করে বেড়াতেন। তার ছেলেরা ঢাকায় কি কাজ করতেন তা কাউকে কোনদিন বলেননি। পরে সোহেল পুলিশের হাতে ধরা পরার পর সব জানাজানি হয়। তখন থেকেই সোহেলের বাবা আবু তাহেরকে আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাহাব পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় থানা পুলিশ।

আদিতমারী থানার ওসি মোক্তারুল ইসলাম জানান, পুরো আদিতমারীতে কড়া নজরদারি করছে। এছাড়াও ওর বাড়িতে রাখা হয়েছে নজরদারি। যেন কোনোভাবেই সোহেল সেখানে এসে আশ্রয় নিতে না পারে। 

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, ক্ষমতায় আসার পরেই আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর ভূমিকা পালন করে আসছে। সোহেল যত বড়ই জঙ্গি হোক না কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাকে ধরা পড়তেই হবে।

উল্লেখ, গত ২০ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাহাবের হাজিরা ছিল। হাজিরা শেষে তাদের কারাগারে নেওয়ার পথে তারা পালিয়ে যান। ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। তারা দুইজন প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh