নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:২০ এএম
ডেনিমের প্যান্ট। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম বা জিনসের পোশাক রপ্তানিতে সবার শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশ ৭৩৮ কোটি ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ দশমিক শূন্য এক শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে প্রথম ৯ মাসে ৫২০ কোটি ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করা হয়েছিলো।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) পরিসংখ্যানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক ও মুখপাত্র মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম পোশাকের ক্ষেত্রে বরাবরই বাংলাদেশের অবস্থান ভালো ছিল। এখনো ভালো। করোনার প্রভাব ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সামগ্রী ব্যবসা খারাপ হলেও ডেনিম পোশাক রপ্তানিতে ৪২ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে জ্বালানি বিশেষ করে গ্যাস সংকটের কারণে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’
গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা জানান, তিন কারণে বাংলাদেশের ডেনিম পণ্য এখন বিশ্বসেরা। এর প্রথম কারণ হচ্ছে, ডেনিম ফেব্রিকসের কাঁচামাল বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। ফলে দাম কম। দ্বিতীয় কারণ হলো, অভিনব ডিজাইন এবং সৃজনশীল ডেনিম পোশাক প্রস্তুত করতে বাংলাদেশের নৈপুণ্য এবং তৃতীয় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের ডেনিমের কারখানাগুলো অত্যাধুনিক এবং ওয়াশিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উৎকৃষ্ট। ফলে উৎপাদিত পণ্যের ফিনিশিং হয় আকর্ষণীয়।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পাট ও তুলা এবং একই রকম আঁশ-জাতীয় দ্রব্যের সংমিশ্রণে সাশ্রয়ী মূল্যে সুতা উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উন্নতমানের ডেনিম কাপড় তৈরি হয়। বাংলাদেশের পাট ও তুলার মিশ্রণে সুতা তৈরি হয়। সেই সুতা থেকে বানানো হয় ডেনিম কাপড়।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৭৩৮ কোটি ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করলেও একই সময়ে চীন সেখানে রপ্তানি করেছে মাত্র ২৯১ কোটি ডলার পরিমাণ পোশাক। তবে ডেনিম পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরই রয়েছে মেক্সিকোর নাম। এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ৫৬১ কোটি ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করেছে। তৃতীয় শীর্ষ দেশ হিসেবে নাম রয়েছে পাকিস্তানের। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রে ৩৭৬ কোটি ডলারের ডেনিম পোশাক রপ্তানি করেছে। আর ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ৩৪৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ পোশাক।
ডেনিম নামের বিশেষ কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাকের নাম জিনস। শুরুতে ডেনিম কাপড়ে তৈরি প্যান্টকে জিনস বলা হতো। এখন জিনস শব্দটি এতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, অনেকে ডেনিম কাপড়কেই জিনস নামে চেনেন। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণে প্যান্টের পাশাপাশি ডেনিম কাপড় দিয়ে এখন ছেলে ও মেয়েদের শার্ট ও জ্যাকেট, পাঞ্জাবি, মেয়েদের টপস, বাচ্চাদের পোশাক তৈরি হচ্ছে সমানতালে। ফ্যাশনসচেতন মানুষের হাতব্যাগ, কাঁধে ঝোলানোর ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, এমনকি পায়ের জুতায়ও স্থান করে নিয়েছে ডেনিম কাপড়। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশেও এই পোশাক রপ্তানিতে এখন শীর্ষস্থানে বাংলাদেশ।