সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০২:০৫ পিএম
প্রতীকী ছবি
সন্দেহ এক ধরনের রোগ। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়- কোনো অমূলক ধারণা বা ভ্রান্ত বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপনেই মানসিক ব্যাধির সূত্রপাত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোনো জিনিস চুরি গেলে প্রথমেই কাউকে সন্দেহ করি। অনেকেই তার সন্দেহকে সঠিক ভেবে অমানবিক বা খারাপ কিছু করে থাকেন, যা ঠিক নয়।
গত ২২ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হয়, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বরদিয়া গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে ৩৭ হজার টাকা চুরি হলে তিনি এ ঘটনায় তার ভাইকে সন্দেহ করেন। এর পর লোকজন নিয়ে তার ভাইকে পেটাতে শুরু করলে ঘটনাস্থলেই ওই ব্যক্তি মারা মারা যান।
কেনো এ রকম হলো? ওই ব্যক্তি কি মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিলেন? এ ধরনের ঘটনায় এ রকম প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক; কিন্তু বাস্তবতা বলছে- তিনি স্বাভাবিক ছিলেন। কেননা শুধু তিনি নন, তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে নিয়ে তিনি এ ঘৃণ্য কাজ করেন। নিঃসন্দেহে এটি আমানবিক কাজ। টাকা চুরি যাওয়ায় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ জন্য নানা রকম ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি তা না করে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেন। তিনি নিজে একজন বৃদ্ধ হয়ে আরেক বৃদ্ধকে কীভাবে পিটিয়ে মেরে ফেললেন?
আমরা কোন ধরনের সমাজে বাস করছি? একজন মানুষকে শুধু সন্দেহ করে পরিবারের সবাই মিলে মারধর করে তাকে মেরে ফেলে- এ কিসের আলামত?
আমাদের সমাজে অন্যকে অসম্মান, অপমান, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা এবং হেয় করার সংস্কৃতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর আগেও এ ধরনের নানা ঘটনা ঘটেছে। জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যায় অনেক সময় ভাই ভাইকে খুন করছে। ব্দ্ধৃ মা-বাবার সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাদের নিঃস্ব করে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে ইত্যাদি।
অনেক সময় এসব ঘটনার সঠিক বিচার হয় না। যারা এ ধরনের আচরণ করছে তাদের যেমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার, তেমনি জাতিকে বোঝাতে হবে- এ ধরনের আচরণ সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
প্রাচীনকাল থেকেই পারিবারিক সম্প্রীতি, বড়দের প্রতি সম্মান এবং মানবিক মূল্যবোধ আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এখন সেখানে লোভ, প্রতিহিংসা এবং মারামারির ঘটনা ঘটছে। সমাজে সহনশীলতার অভাব দেখা দিয়েছে। ইউরোপের স্কুলগুলোতে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য বিশেষভাবে শিক্ষা দেওয়া হয়। আমরা তাদের কাছ থেকে পোশাক পরা, ফ্যাশন, বিলাসিতাসহ নানাকিছু শিখছি; কিন্তু তারা যে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছেন, সেটা শিখছি না কেনো? কেনই বা আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে তাদের ভালো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করছি না? এ বিষয়গুলোতে সরকার, শিক্ষক, পরিবার- সবার মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন একটি দেশকে এগিয়ে নিতে পারে না। দেশের মানুষের শিক্ষা, মানবিকতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধগুলো তাদের উন্নত এবং ভালো জাতি হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করে। এ সব বিষয়ে আমাদের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।