সাবেক হলেই কি শত্রু

আফরোজা চৈতী

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৩:০৫ পিএম

বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন তাহসান-মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত

বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন তাহসান-মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত

প্রাক্তন বা সাবেক- এই শব্দদুটির মধ্যে অনেক সময়ই জড়িয়ে থাকে ঘৃণা, রাগ আর অসন্তোষের এক তীব্র পাহাড়। একটা সময় যে থাকতো জীবনের প্রায় পুরো অংশজুড়ে, সেই মানুষটাই কেমন অচেনা আর পর হয়ে যায়। এটি কোনো সুখকর অনুভূতি নয় বরং বেশ কষ্টদায়ক আর স্ট্রেসফুল।

একসময় যার সম্পর্কে প্রশংসার ফুলঝুরি ঝরে পড়ত, সেই তার সম্পর্কেই শুরু হয় দোষারোপ ও কুৎসার এক নোংরা কাদা ছোড়াছোড়ি; কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এ ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলো মোটেও ভালো নয়। বরং এ সময়ে নিজেদের মধ্যে ধৈর্য ও নম্রতার পরিচয় দিতে হবে।  

এমনিতেই বিচ্ছেদের কারণে এ সময় মনে এক গভীর ক্ষত তৈরি হয়। একটি অভ্যস্ত সম্পর্ক থেকে বের হয়ে নিজের মতো করে ধাতস্ত হতেও বেশ সময় লাগে। তার ওপর যদি বাড়তি রাগ, ঘৃণা ও ক্ষোভের নেতিবাচক পাহাড় তৈরি হয় সেটা শরীর বা মন কোনোটার জন্যেই ভালো কিছু বয়ে আনে না। তাই কী করবেন সাবেকের সঙ্গে কথোপকথন ও আচরণে? প্রাক্তন হলেই কি সে আপনার শত্রু? নাকি তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কটাই রাখবেন?  

এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তবে তার সঙ্গে তিন দিনের বেশি রাগ করে থাকতে পারবে না। যদি এর বেশি তার জন্য মনে রাগ পুষে রাখ, এর অর্থ হলো- তার জন্য তোমার ভালোবাসার ঘাটতি আছে। একটি সম্পর্ক তখনই ভেঙে যায়, যখন সেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ঘাটতি ঘটে, মমতা ও সহনশীলতার কমতি ঘটে। তাই স্বভাবতই যখন কোনো সম্পর্ক ভেঙে যায়, তখন সেখানে ভালোবাসার বদলে প্রকাশ হতে থাকে ঘৃণা, ক্ষোভ ও রাগ। 

সাবেক স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার দোষ-ত্রুটি সবার সামনে তুলে ধরতে থাকলে নিজের ক্ষুদ্রতাই প্রকাশ করা হয়। ভালো হয়, একটা সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখতে পারলে এবং ‘প্রাক্তন’ সম্পর্কে দুটি ভালো কথা বলতে পারলে। এতে ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে, সমাজের কাছে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রাক্তন বা সাবেকদের জন্য কিছু টিপস- 

  • প্রথমেই ক্ষমা করতে শিখুন। জোরে শ্বাস নিন এবং ভেতরের ক্ষতগুলো আড়াল করে প্রাক্তন প্রসঙ্গ এলে মিষ্টি হেসে এড়িয়ে যান। কেউ আসলে জীবনের ক্ষতে প্রলেপ বুলিয়ে দিতে আসবে না। তাই ক্ষমা করার অভ্যাস ও সাবেককে নিরপেক্ষভাবে ভাবার অভ্যাস করুন।
  • যদি সাবেকের সঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা হয় তবে তাকে না এড়িয়ে গিয়ে স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ বজায় রাখুন। অতি কথা বা রাগ না দেখানো- দুটি থেকেই বিরত থাকুন।
  • নীরবতার একটি শক্তি আছে। সাবেকের সঙ্গে হয়তো এবিউসিভ সম্পর্ক ছিল, তার পরও ক্ষোভ বা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন এবং চেষ্টা করুন বিনয়ী হওয়ার। একটি  কথা আছে- কোনো প্রতিশোধ না নেওয়া একটি বড় প্রতিশোধ।
  • সাবেককে মন থেকে মুছে ফেলার জন্য নিজেকে মানসিক যন্ত্রণা না দিয়ে বরং বিষয়টি ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করুন। সন্তানের কাছে নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে কাদা ছোড়াছোড়ি না করে বরং সহনশীলতার পরিচয় দিন। প্রশংসা না করলেও সন্তানের সামনে দুর্নাম করার চেষ্টা করবেন না। 
  • সাবেকের সামনে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী ও গুছিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করুন। মনে যতই ঝড় থাকুক আচরণে সংযত হোন। কারণ প্রাক্তন মানেই প্রতিপক্ষ নয়। সম্পর্ক ভেঙে গেছে মানেই যে চিরশত্রু হয়ে একের বিরুদ্ধে অন্যের বিষোদ্গার করতে হবে তা নয়- এই কথাটা একবার বিশ্বাস করতে পারলে জীবনটা অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh