চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ‘অস্বাভাবিকভাবে’ কমছে আমদানি-রপ্তানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২২, ০৮:৪৮ এএম

চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সংগৃহীত

দেশের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ‘চট্টগ্রাম বন্দর’। গত দুই মাস ধরে অস্বাভাবিকভাবে এই বন্দর দিয়ে কমেছে পণ্যের আমদানি-রপ্তানি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের হিসেব করা হয় বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে। আর গত দুই মাসে বন্দরে পণ্য কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। এ কারণেই এই বন্দর দিয়ে আমদানি-বাণিজ্য কমে গেছে।

তারা বলছেন, মূলত ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র খুলতে না পারায় আগের মতো পণ্য আমদানি করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। যার ফলে বাণিজ্য সংকট দেখা যাচ্ছে। 

সূত্র জানায়, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯৭ হাজার ৫৩৮ টিইইউস। যেটি সেপ্টেম্বরে ছিল এক লাখ এক হাজার ৪৯৩ টিইইউস। আর আগস্টে এটি ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৯২০ টিইইউস। একইভাবে অক্টোবরে রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে ৫৯ হাজার ৩৩১ টিইইউস। এর আগে সেপ্টেম্বরে এটি ছিল ৬৩ হাজার ৮০৩ টিইইউস, আগস্টে ছিল ৭৫ হাজার ৬৯৭ টিইইউস। আগস্টের তুলনায় দুই মাসের ব্যবধানে রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং কমেছে ১৬ হাজার ৩৬৬ টিইইউস। আর রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং কমেছে ১৭ হাজার ৩৮২ টিইইউস।

কাস্টমস সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভোজ্য তেল, গম, ছোলা, চিনি, মসুর ডাল, মটর ডাল, খেজুর, প্রসাধনী সামগ্রী, বিলাসবহুল পণ্য, শিল্প কারখানার কাঁচামাল, পাথর, বিভিন্ন ফল, অয়েল কেক, ছোলা, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্য উল্লেখযোগ্য হারে আমদানি হয়। তবে আগস্ট থেকে অক্টোবর এ তিন মাসে পণ্যগুলোর আমদানি কমেছে চোখে পড়ার মতো। 

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগই আসে পোশাক খাত থেকে। আর এই পোশাক খাতের প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আসে বিদেশ থেকে। ডলার সংকটের কারণে কাঁচামাল আনতে ভোগান্তিতে পড়ায় রপ্তানি আয়ও কমেছে অস্বাভাবিকভাবে। 

জানা গেছে, চলতি বছরের আগস্টে  চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩৭৪ কোটি ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। সেপ্টেম্বর মাসে এই আয় ৩১৬ কোটি  ডলারে নেমে আসে। সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসে এই আয় তলানিতে নেমে ২৩৭ কোটি ডলারে পৌঁছে। এর মধ্যে কাঁচামাল আমদানি করতে  না পারায় কার্যাদেশ বাতিল হওয়ায় ছোটখাটো অনেক গার্মেন্ট মালিক তাদের কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। 

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের মাধ্যমে যে আমদানি-রপ্তানি হয় তার ওপর ভিত্তি করে প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। ডলার সংকট কাটাতে সরকার ১৩৫টি ধরনের বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ বেশি শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে এসব পণ্যের আমদানি কমে গেছে। এছাড়া রপ্তানিও কমে গেছে অনেক বেশি। এ কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, মূলত ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি নিম্নমুখী হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। আর আমাদের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে গার্মেন্ট খাত থেকে। এই খাতের  কাঁচামাল শতভাগ আমদানিনির্ভর। এই কাঁচামাল ডলারেই আনতে হয়। আর কাঁচামাল আমদানিতে সমস্যা হওয়ায় রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh