বয়স একটা সংখ্যা মাত্র

এন ইসলাম

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৯ পিএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২, ১২:৩৭ পিএম

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। ছবি: সংগৃহীত

কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। ছবি: সংগৃহীত

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। গেল ১৭ নভেম্বর ছিল তার ৭০তম জন্মদিন। ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন এ সংগীতশিল্পী। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী এবং মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা। 
সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। 
নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন, এবার ব্যক্তিজীবনে ৭১ বছরে পা রেখেছি। জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আইয়ের ‘তারকাকথন’ অনুষ্ঠানে তাকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। এ ছাড়া অনুজ চার শিল্পী তাকে নিয়ে একটি গান গেয়েছে। চ্যানেল আইয়ের উদ্যোগে এটি তৈরি করা হয়। গানটি গেয়েছে কোনাল, ঝিলিক, মেজবা বাপ্পী ও তরিক মৃধা।
সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। 
রুনা লায়লা বলেন, এটা সত্যিই খুব অপ্রত্যাশিত। খবরটি শোনার পর ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম। কারণ, শিল্পী হিসেবে গান দিয়ে জন্মদিনের উপহার, নিঃসন্দেহে দারুণ ভাবনা।
যারা গানটি গেয়েছে, আমি তো ওদের বলি- আমার বাচ্চারা। বাচ্চারা যখন আমাকে নিয়ে গাইল, এটা তো সত্যিই বিশেষ আনন্দের ও আবেগের ব্যাপার।’ 
সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। 
পারিবারিকভাবেও ছিল আয়োজন। এটি আয়োজন করেন তার স্বামী চিত্রনায়ক আলমগীর। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বাড়িতে সন্ধ্যায় জন্মদিন উদাযাপন করা হয়। জন্মদিন প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন, মনেপ্রাণে আমি এখনো ১৭ (হাসি), আমি সবসময় বিশ্বাস করি, মানুষের দেহের বয়স বাড়ে, মনের বয়স কখনো বাড়ে না। তাই তো আমার কাছে বয়স শুধু একটা সংখ্যা মাত্র। মনের বয়স কখনই বাড়তে দিই না। সবকিছুতে আসলে মনের জোরটাই বেশি দরকার।’ 
সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। 
১৯৬৪ সালে সাড়ে ১১ বছর বয়সে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ চলচ্চিত্রে প্রথম প্লেব্যাক করেন গানের পাখি। রুনা লায়লা এ দেশের প্রথম সংগীতশিল্পী, যিনি জয় করে নেন উপমহাদেশের মানুষের হৃদয়। নব্বই দশকে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি সুরকার নিসার বাজমির সুরে একদিনে ১০টি করে, তিনদিনে ৩০টি গানে কণ্ঠ দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। বাংলা ছাড়া রুনা লায়লা উর্দু, হিন্দি আর ইংরেজি ভাষা জানেন।

তবে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, পশতু, বালুচ, আরবি, পারসিয়ান, মালয়, নেপালি, জাপানি, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন তিনি। 
সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা ও তার স্বামী চিত্রনায়ক আলমগীর। 
১৯৭৪ পর্যন্ত ছিলেন পাকিস্তানে এ জীবন্ত কিংবদন্তি। যতদিন ছিলেন, স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন। পাকিস্তানের শ্রোতা, দর্শকরা আধুনিক পারফরম্যান্স কেমন তা বুঝতে পেরেছিলেন রুনাকে দেখে। করাচি টেলিভিশনে ‘বাজমে লায়লা’ নামে একটা অনুষ্ঠান হতো, শুধু রুনা লায়লার গানের অনুষ্ঠান। সেখানে পাঁচ রকমের পাঁচটি গানে রুনা হাজির হতেন পাঁচ ধরনের সাজে।
সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা।
তখন সব নারী শিল্পীই গাইতেন শাড়ি পরে। ধরে নেওয়া হতো শাড়ি না পরলে দর্শক পছন্দ করবে না। রুনা সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছিলেন। ওই আমলে এমনকি শার্ট-প্যান্ট পরেও গান গেয়েছেন। পাকিস্তানের অনেক মানুষ ‘দমা দম মাস্ত কালান্দার’ গানটা এখনো তার কণ্ঠেই শুনতে চান। ভারতে ‘ও মেরে বাবু ছ্যাল ছাবিলা’ শুনলে এখনো নেচে ওঠেন অনেকে।

বাংলায় তো কত জনপ্রিয় গান তার- ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো’, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম’, ‘যখন আমি থাকবো না গো’। 
সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা।
শুধু গানই নয়, তরুণ প্রজন্মের কাছে ফ্যাশন আইকনও তিনি। তার সাজসজ্জা, পোশাক, গাওয়ার ভঙ্গি থেকে শুরু করে সবই অনুসরণ করে তরুণ প্রজন্ম। রুনা লায়লা নিজেও তরুণদের নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। তরুণদের নিয়ে তিনি বলেন, ‘সুযোগ দিলেই তরুণরা নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে।
সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা।
এজন্য সবার উচিত তাদের কথা ভাবনায় রাখা। জানি না, কেন আমাদের এখানে অনেকে নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে ভয় পায়। ওদের সুযোগ না দিলে প্রমাণ করবে কীভাবে? আমিও বলি, ওদের দিয়ে গাওয়ান। ওদের তৈরি করতে হবে।’ 
গানের বাইরে এ শিল্পী চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। ‘শিল্পী’ নামের একটি সিনেমাতে দেখা যায় তাকে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh