কবিতা ঘোমটা দেওয়া নববধরূর মতো আড়াল খোঁজে: উপল বড়ুয়া

এহসান হায়দার

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২২, ০১:২১ পিএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২২, ০১:২২ পিএম

উপল বড়ুয়ার প্রথম উপন্যাস ‘মহাথের’ বইয়ের প্রচ্ছদ। ফাইল ছবি

উপল বড়ুয়ার প্রথম উপন্যাস ‘মহাথের’ বইয়ের প্রচ্ছদ। ফাইল ছবি

উপল বড়ুয়া, কবি ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম কক্সবাজারের রামুতে। তিনি কবিতার মানুষ, লিখেছেন গল্পও। এবারে তার প্রথম উপন্যাস ‘মহাথের’ প্রকাশ হতে চলেছে। এক বৌদ্ধধর্মীয় গুরুর সন্ন্যাস-জীবনের সুখ ও দুঃখের জীবনকাহিনি, মহাকব্যিক যাত্রা যেন এ উপন্যাস।

উপলের এ যাবৎ প্রকাশ হয়েছে- ‘কানা রাজার সুড়ঙ্গ’ (২০১৫), ‘উইডের তালে তালে কয়েকজন সন্ধ্যা’ (২০১৮), ‘তুমুল সাইকেডেলিক দুপুরে’ (২০২০) এবং ‘ডিনারের জন্য কয়েকটি কাটা আঙুল’ (২০২০) নামে চারটি গ্রন্থ।

প্রকাশিতব্য উপন্যাস ‘মহাথের’ বিষয়ে লেখকের সঙ্গে টুকরো কথারা ফোঁটন কেটেছিলেন- এহসান হায়দার

উপল, আপনি তো কবিতা লেখেন- হঠাৎ করে উপন্যাস আসছে ‘মহাথের’, কবিতা ছেড়ে কেন উপন্যাসে মন দিলেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজে দেওয়া যায়। যদি বলি- ইচ্ছে হয়েছে তাই লিখছি; কিন্তু আমার ফিকশনের মূল চরিত্র মহাথের হলে উত্তরটা অবশ্য কোমলভাবে দুই অর্থে দিই; আমি বলব- কেবল কবি হিসেবে আমি নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। আমি বিভিন্ন রকমের কাজ করতে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করি। কবির চেয়ে নিজেকে লেখক পরিচয় দিতে ভালো লাগে। দীর্ঘদিন ধরে কবিতা লিখছি। সত্য হলো- যে কথাটা আমি ন্যারেট করতে চেয়েছি ‘মহাথের’-এ, তা কবিতার ফর্মে সম্ভব নয়। কবিতা খুব কম লিখি এখন, তবে ছাড়িনি।

কবির গদ্য বেশ কাব্যিক হয়, গোছানো আর ভাষাশৈলীর মুন্সিয়ানায় থাকে চূড়ান্ত আর্ট- এ বিষয়ে কী বলবেন আপনি?

মনীন্দ্র গুপ্তের গদ্যে, আল মাহমুদের গদ্যের ভেতরে কাব্যিকতা আছে। এটা হয়তো অভ্যেস, সাবকনশাস মাইন্ডে ঢুকে পড়ে; কিন্তু একজন কবির জন্য এটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং যে, গদ্যকে কাব্যবিবর্জিতভাবে লেখা। দুইটা দুই ফর্ম। কবিতায় এক শব্দে যা বোঝানো যায়, গদ্যে তা এক বাক্য দাবি করে। কবিতা ঘোমটা দেওয়া নববধরূর মতো আড়াল খোঁজে। গদ্য কিছু একটা বলতে প্রায় উদ্গ্রীব থাকে। আর শক্তিশালী ভাষা দুই ক্ষেত্রেই বাচালতা অপছন্দ করে। 

আচ্ছা, আপনার নতুন উপন্যাসের গল্পটা আমাদের বলবেন কি কিছুটা...

ট্রেইলার হিসেবে বললে, এটা এক বৌদ্ধধর্মীয় গুরুর সন্ন্যাস জীবনের সুখ ও দুঃখের জীবনকাহিনী কেবল। ধর্মকে আমি বিশ্বাস বা আচরণের জায়গা থেকে দেখি না। প্রতিটি ধর্মের একটা পলিটিক্যাল সাইট আছে। কথাটা এই কারণে বলা যে, মহাথের ফিকশনটাকে আমি কোনো প্রকার ধর্মীয় গ্রন্থের ট্যাগ দিতে চাই না। এটা জাস্ট একটা ফিকশন, যেসব ঘটনা জীবনে কারও সঙ্গে ঘটেনি। আমি কেবল উপাদানটুকু নিয়েছি বৌদ্ধধর্ম থেকে। আর এটাকে উপন্যাস বা গল্প নয়, ফিকশন বলতে চাই। এটা পুরোপুরি কল্পনাশ্রিত। 

কবিতা, গল্প, উপন্যাস- এ তিনের মধ্যে পার্থক্য করতে বললে কবি হিসেবে আপনি তা কীভাবে করবেন? 

এটা আসলে কঠিন প্রশ্ন। মহাকাব্যের যুগ থাকলে হয়তো গল্প-উপন্যাসের প্রয়োজন পড়ত না। মানুষ বাঁচে গল্পের ভেতরে, কাহিনি শুনতে ভালোবাসে। আর আদিকাল থেকে কবিতা ধারণ করে আছে পৃথিবীর অজস্র রহস্য। এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, মানুষ কখনো কবিতার ভাষায় দৈনন্দিন জীবনের কথা বলেনি; কিন্তু সাহিত্যের আদিরূপ কবিতা! 

বুদ্ধের জগতকে আপনার কবিতায় কীভাবে দেখেন? 

মাঝেমধ্যে ভাবি, আমার জন্ম তো কোনো মুসলিম বা হিন্দু পরিবারে হতে পারতো। তখন আমার বিশ্বাসের জায়গাটা কেমন হতো? আমার জন্ম বড়ুয়া পরিবারে হওয়ায় বৌদ্ধধর্মীয় আচার-আচরণ খুব কাছ থেকে দেখেছি। বুদ্ধের জগত শান্তিময়। তবে তাঁর এভাবে স্মিত হাসি দিয়ে পূজা গ্রহণ আমার পছন্দ নয়। আমি বুদ্ধকে প্রশ্ন করেছি, কেন তাঁর জন্ম কেবল উপমহাদেশে, সাইবেরিয়াতে নয় কেন? আমার ‘বুদ্ধ’ নামের কবিতাটা পড়লে তা বুঝতে পারবেন; কিন্তু বুদ্ধের উত্তর তাঁর হাসিতে। সেই হাসি আমাকে আরও অনেক প্রশ্ন করার সুযোগ করে দিয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh