ইরানের বিপক্ষে জয়ে চোখ ওয়েলসের

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২২, ০১:৪৫ পিএম

ইরান ও ওয়েলস মুখোমুখি হবে আজ। ছবি: ফিফা

ইরান ও ওয়েলস মুখোমুখি হবে আজ। ছবি: ফিফা

গ্যারেথ বেলের কারণে কাতার বিশ্বকাপে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে ওয়েলস। প্রথম ম্যাচে দারুণ খেলে ড্র করে দ্বিতীয় রাউন্ডের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে। সে হিসেবে আজকে ইরানের বিপক্ষে জয়ে চোঁখ রেখেছে দেশটি। 

আহমদ বিন আলি স্টেডিয়ামে বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি। যদিও বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো হয়নি গ্যারেথ বেলের ওয়েলসের। গ্রুপ ‘বি’-এর নিজেদের প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে তারা। তাই নক-আউটে যেতে হলে দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই দলটির। কারণ শেষ ম্যাচে তাদের কঠিন প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে দাপটের সঙ্গে ম্যাচ শুরু করেছিল তাতে ওয়েলসের সৌভাগ্য একাধিক গোল হজম করতে হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধটা অবশ্য পুরোপুরি পাল্টে যায়। পেনাল্টি স্পট থেকে ৮২ মিনিটে গ্যারেথ বেল সমতা ফেরানোর আগে ড্রাগন্সরা আরো কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল। বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে নামা বেলের এটাই বিশ্বমঞ্চে প্রথম গোল। যদিও ওয়েলসের তারকা এই স্ট্রাইকার তার সেরাটা দিতে পারেননি।

তারপরও সেই বেলের কাঁধে ভর করেই আরও একবার নিজেদের রক্ষা করেছে ওয়েলস। এখন ইরানকে হারাতে পারলে নক-আউট পর্বের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে ৬৪ বছর পর বিশ্বকাপের মূল পর্বের টিকিট পাওয়া ওয়েলস। এদিকে ইংল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত ইরান চাইবে যে কোনোভাবেই ওয়েলসের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে। অভিজ্ঞ কোচ কার্লোস কুইরোজের অধীনে ইরান যে নিজেদের আগেও প্রমাণ করেছেন তার উদাহরণও রয়েছে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, সেপ্টেম্বরে দুটি প্রীতি ম্যাচে বিশ্বকাপের দুই দল উরুগুয়েকে হারানোর পর সেনেগালের সঙ্গে ড্র করেছিল কুইরোজ বাহিনী। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সান্ত্বনার দুটি গোলই এসেছে দলের সেরা স্ট্রাইকার মেহেদি তারেমির কাছ থেকে।

ওয়েলসকেও যে তারেমি স্বস্তিতে থাকতে দেবেন না তা সহজেই অনুমেয়। ইনজুরি কাটিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বদলি হিসেবে খেলতে নামা সারদার আজমুনও ইরানকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। এই দুই তারকার উপস্থিতি সত্ত্বেও ইরান শেষ নয়টি ম্যাচে দুটির বেশি গোল করতে পারেনি। এই একটি জায়গায় কুইজকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। ফিটনেসের অভাবে হ্যারিও উইলসনকে মূল একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। মিডফিল্ডার জো অ্যালেন হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি কাটিয়ে ইরানের বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে পূর্ণাঙ্গ অনুশীলনে ফিরেছেন। ইনজুরির কারণে সেপ্টেম্বর থেকে মাঠের বাইরে ছিলেন সোয়ানসি সিটির এই মিডফিল্ডার। কাতারে আসার পর থেকে দলের বাইরে থেকে একাই অনুশীলন করেছেন অ্যালেন। গত বুধবার তিনি পুরো দলের সঙ্গে যোগ দেন। গোড়ালির ইনজুরিতে পড়া ইথান আমপাডুর পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এর আগে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পায়নি ওয়েলস। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে আগে গোল হজম করে শেষে পেনাল্টিতে ১ পয়েন্ট বাঁচে তাদের। আর ইরান দেখে বড় ব্যবধানে হার। এদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৬-২ গোলে বিধ্বস্ত হয় ইরান। শুরুটা বাজে হলেও ইরানকে সমীহ করছেন ওয়েলস তারকা হ্যারি উইলসন। ফুলহামের এই উইঙ্গার মনে করেন, ঘুরে দাঁড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করবে ইরান। উইলসন বলেন, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তাদের জন্য বাজে ফল ছিল। যদিও ইংল্যান্ড বরাবরই কঠিন টিম। নিশ্চিতভাবে ইরান প্রত্যাবর্তনের চেষ্টায় থাকবে। তাদের বিপক্ষে আমাদের লড়াই করতে হবে। তিন পয়েন্ট পাওয়ার মতো ছন্দে রয়েছি আমরা। আর সেটি আমাদেরই ওপর নির্ভর করছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সমতাসূচক গোলে একটি কীর্তি গড়েছেন ওয়েলস অধিনায়ক গ্যারেথ বেল। মার্কিনদের বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে ৪১তম গোলটি করেছেন সাবেক রিয়াল তারকা। সেটি ছিল বেলের ১০৯তম ম্যাচ। এই পরিমাণ ম্যাচ খেলেছেন শুধু ওয়েলসের আরেক ফুটবলার ক্রিস গান্টার। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচের হার একপাশে রাখলে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে ওয়েলসের চেয়ে এগিয়ে ইরান। নিজেদের সবশেষ ৬ ম্যাচে ৩ জয় পেয়েছে কার্লো কুইরোজের দল। হেরেছে দুই ম্যাচে। বিপরীতে নিজেদের সবশেষ ৬ ম্যাচের ৪টিই হেরেছে ওয়েলস।  তবে ইউরোপিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে সাম্প্রতিক রেকর্ড মোটেই ভালো নয় ইরানের। সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারসহ ইউরোপের ৯ দলের বিপক্ষে ৭টিই হেরেছে ইরান। জয় নেই একটিও। এই ম্যাচগুলোতে ২০টি গোল খেয়েছে ইরান। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৪৪ বছর পর মুখোমুখি হচ্ছে ওয়েলস ও ইরান।

১৯৭৮ সালে প্রথম এবং সবশেষ দেখা হয়েছিল দুই দলের। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচটিতে ইরানকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল ওয়েলস। ওয়েলসের চেয়ে ইরানের বিশ্বকাপ ইতিহাস সমৃদ্ধ। ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে ইরান। ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপ অভিষেক হয় দলটির। এরপর ১৯৯৮, ২০০৬, ২০১৪ এবং ২০১৮ আসরে অংশ নিয়েছে দলটি। তবে কখনো গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে পারেনি ইরান। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে বিশ্বকাপের তিন আসরের বাছাই খেলার সুযোগ হয়নি ওয়েলসের। সেসময় ফিফার সদস্য ছিল না দলটি। ১৯৫০ সালে সর্বপ্রথম বাছাই খেলে ওয়েলস। এরপর ১৯৫৮ সালে তিনবারের প্রচেষ্টায় বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয় ড্রাগনরা। এরপর আর বিশ্বকাপে সুযোগ হয়নি ওয়েলসের। ৬৪ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাতারে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা হচ্ছে গ্রেট ব্রিটেনের দলটির। অভিষেক আসরেই অবশ্য বাজিমাত করেছিল ওয়েলস। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল দলটি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh