সৌভাগ্যের লাল ফিতায় লুকিয়ে যত রহস্য!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:২৫ পিএম

লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত

লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের অনেক সেরা সেরা খেলোয়াড়রাই কুসংস্কারে ভোগে থাকেন। কেউ ইচ্ছায় আবার কেউ সাফল্যের জন্য। যার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বাঁ পায়ে লাল ফিতা বেঁধে ময়দানি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছেন আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি। 

সদ্যসমাপ্ত কাতার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া আর্জেন্টিনার অধিনায়ক এবং অনেকের মতেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্য কারণ এক টুকরো লাল ফিতা? ‘হ্যালো মেসি, এটা আমার মায়ের দেয়া লাল ফিতা। আমার মা আমার চেয়েও তোমাকে বেশি ভালোবাসে। যদি তুমি চাও, তাহলে এটা আমি তোমাকে দিতে পারি। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতার লাকি চার্ম হিসেবে এটাকে ব্যবহার করতে পার। কিন্তু আমাকে কথা দিতে হবে, তুমি এটাকে অনেক যত্ন করে রাখবে।’

সময়ের হিসেবে চার বছর আগে আর্জেন্টাইন সাংবাদিক রামা পাস্তরোত্তো মেসির হাতে তুলে দিয়েছিলেন তার মায়ের দেয়া আশীর্বাদপুষ্ট সেই লাল ফিতে। ১৯৮৬ সাল থেকে কথিত আর্জেন্টিনার এক দেবীর অভিশাপ কাটিয়ে কিভাবে এই লাল ফিতে মেসির ও আর্জেন্টিনার জন্য পয়মন্ত ও সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে উঠল? গত রবিবার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে জেতার পর ড্রেসিংরুমে আর্জেন্টিনা দল যখন ৩৬ বছর পর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ উদযাপন করছিলেন, তখন তার বাম গোড়ালির চারপাশে লাল ফিতা বাঁধা দেখা গেছে। এটি মেসি পেয়েছিলেন রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে আইসল্যান্ডের সাথে আর্জেন্টিনার ১-১ গোলে ড্রয়ের পর। ওই ম্যাচে মেসি পেনাল্টি মিস করেছিলেন।

পান্তরোত্তো মেসিকে ইন্টারভিউ শেষে সেই লাল ফিতে নেয়ার প্রস্তাব দেন। মেসি তাকে অবাক করে ফিতেটি গ্রহণ করেন। নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে এই ফিতে পরে মেসি জোড়া গোল করে এবং আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডে উন্নীত হয়। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের কাছে হেরে গিয়ে আর্জেন্টিনা সেবার বিদায় নেয়। কিন্তু ওই লাল ফিতের প্রতি মেসির বিশ্বাসে বিন্দুমাত্র চিড় ধরেনি। এরপর স্প্যানিশ ক্লাব বার্সিলোনার হয়ে বহু ম্যাচেই মেসির পায়ে শোভা পেয়েছে সেই লাল ফিতে। ২০১৯ সালে লিভারপুল থেকে রেকর্ড ১৫০ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফারে বার্সিলোনায় আসেন ব্রাজিলের তারকা কুটিনহো। কিন্তু ছন্দ হারিয়ে ম্যাচের পর ম্যাচে রীতিমতো ধুঁকছিলেন তিনি। সেভিয়ার সঙ্গে কোপা দেল রের নকআউট পর্বের দ্বিতীয় লেগটা বার্সার জন্য ছিল বাঁচামরার। ম্যাচের আগে মেসি কুটিনহোকে ফিতেটা পড়ে খেলতে বলেন।

ওই ম্যাচে জোড়া গোল করে বার্সাকে জেতালেন কুটিনহো। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে বার্সায় যোগ দেন ফরাসি তারকা ফরোয়ার্ড অ্যান্টোইন গ্রিজম্যান। একের পর এক ম্যাচে বাজে পারফরম্যান্স ও গোলখরায় ভুগছিলেন তিনি। বার্সা সমর্থকদের দুয়োধ্বনি তার জন্য ছিল নিয়মিতভাবে বরাদ্দ! গ্রিজম্যানের এই দুঃসময়ে আবারও এগিয়ে এলেন মেসি। গ্রিজম্যান ধারণ করেন সেই ফিতে। কোপা দেল রের সেমিরে ম্যাচে ৯০তম মিনিটে গোল করে দলকে জেতালেন ও বাঁচালেন গ্রিজম্যান। এবারের কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে গিয়ে বাদ পড়ায় শঙ্কায় পড়ে আর্জেন্টিনা। পরের ম্যাচে দুর্দান্ত একটি গোল করে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে দলকে জেতানোর পর ম্যাচ শেষে মেসির পায়ে আবারও সেই লাল ফিতে দেখা গেছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে মেসি সেই ফিতে দেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে।

ফাইনাল খেলার শেষ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার একটি নিশ্চিত গোল প্রচেষ্টা নসাৎ করে দলকে বাঁচিয়ে দেন মার্টিনেজ। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ফিটনেস সমস্যায় ভুগতে থাকা আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডার ক্রিস্টিয়ান রোমেরার হাতে দেখা গেছে সেই ফিতে। ফাইনালের দিন মেসি সেই ফিতে পরিয়ে দিয়েছিলেন এমিলিয়ানোর হাতে। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে এবং টাইব্রেকারের সময় এই গোলরক্ষক কি করেছেন তা সবারই দেখা এবং জানা। বিশ্বকাপের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনার জন্য যে সাংবাদিক মেসিকে এই লাল ফিতে দিয়েছিলেন, সেটি শুধু মেসির একার নয়, গোটা আর্জেন্টিনা দলের জন্যই সৌভাগ্য বয়ে এনেছে বলে অনেকেই মনে করেন।

খেলোয়াড় হিসেবে সবারই বিশ্বকাপ জিততে ভাগ্য লাগে। এই লাল ফিতেই যেন মেসিদের বিশ্বকাপের সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে গেল। মায়ের দোয়ার চেয়ে বড় দোয়া আর হয় না, সাংবাদিকের সেই মায়ের দেয়া লাল ফিতেই যেন বিশ্বকাপ এনে দিল মেসি এবং আর্জেন্টিনাকে! কুসংস্কারেও লুকিয়ে থাকে সাফল্য।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh