৫ মাসে রাজস্বে ঘাটতি কয়েক হাজার কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:১৫ পিএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:১৫ পিএম

জাতীয় রাজস্ব ভবন। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব ভবন। ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ধস দেখা গেছে। করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ‍উঠলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা দেশের রাজস্বখাত এখনো সামলে উঠতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই প্রভাবে গত পাঁচ মাসে দেশের রাজস্বে ঘাটতি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

এনবিআরের সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। তবে প্রবৃদ্ধির এই হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দুই শতাংশ কম। একইসাথে এই পাঁচ মাসে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনবিআর কর্মকর্তা বলেছেন, এখনকার অর্থনীতির গতি বেশ শ্লথ। তবে সময়ের সাথে সাথে গতি আরো বাড়বে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে তাতে রাজস্ব আদায়ের এই চিত্রকে হতাশাজনক বলা যাবে না। রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি কমায় ঘাটতিও বাড়ছে। 

তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর।

সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, আলোচ্য অর্থবছরের পাঁচ মাসে এক লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছর এনবিআরের মাধ্যমে সংগৃহীত লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আয় হয়েছে মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩১ শতাংশ। বাকি ৬৯ শতাংশ অবশিষ্ট সাত মাসে আদায় করতে হবে।

চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা, যা কোনোভাবেই অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা।

জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জন করতে হলে প্রবৃদ্ধি বা রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে ৬৯ শতাংশ হারে। অথচ পাঁচ মাসে আদায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা আর আদায়ের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে।

অবশ্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হবে আগামী এপ্রিলে। তারপরও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন এনবিআরের ওই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবেই রাজস্ব আদায়ের বেহাল দশা। গত অর্থবছরে আমদানি অনেক বেড়ে গিয়েছিল, যার ফলে আমদানি খাত থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব পেয়েছিল সরকার। এবার আমদানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। স্বাভাবিক কারণে রাজস্বও কম আসছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায়, দেশের মানুষ আগের চেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কম কিনছে। সে কারণে ভ্যাট থেকেও কম কর আসছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হতে পারে। আগামী এপ্রিলে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্পদ কমিটির বৈঠকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হবে।

এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। এ খাতে আদায় হয়েছে ৪৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি ৯৯৩ কোটি টাকা। একই সময়ে আয়কর আদায় হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে এই পাঁচ মাসে আমদানি পর্যায়ে আদায় বেশি পিছিয়ে আছে। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ছয় হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে। আমদানি শুল্ক আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh