মেহেন্দিগঞ্জ আ.লীগের ৫ নেতা বহিষ্কার

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:২৭ পিএম

আওয়ামী লীগের লোগো

আওয়ামী লীগের লোগো

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আগে থেকেই অস্থিরতা চলছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পৌর মেয়র গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিভক্তি ওই এলাকার রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। তার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের জড়িয়ে ডাকাত দলের এক সদস্যের দেয়া বক্তব্য মেহেন্দিগঞ্জ এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলছে। এর মধ্যে ডাকাত সদস্যের বক্তব্যের সূত্র ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের নোটিশ দেয়া হয়েছে। 

আজ রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ওই পাঁচ নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি স্বীকার করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেহেন্দিগঞ্জ পৌর মেয়র কামাল উদ্দীন খান।

তিনি জানিয়েছেন, রবিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন- দরিচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছালাম দেওয়ান, ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নাহিদ দেওয়ান, ইউনিয়ন যুবলীগ আহবায়ক মোশারেফ আকন, দলীয় কর্মী বাচ্চু ও কাশেম দেওয়ান। জরুরি সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আহমেদ, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম ভুলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন দেওয়ান, এস এম আবদুর রহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সরদার উপস্থিত ছিলেন বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি মেহেন্দিগঞ্জে এক ডাকাত সদস্যকে আটক করে পুলিশ। ওই ডাকাত সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন। যেখানে তিনি বলেন, ওই আওয়ামী লীগ নেতারা ডাকাতির সাথে জড়িত এবং তারা ডাকাতির ভাগ পান। এর ভিত্তিতে সংবাদপত্রে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা জরুরি বৈঠক করে অভিযুক্তদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে জানতে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার ইউনুসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ না করে কেটে দেন। যদিও বহিষ্কার হওয়া নেতাদের দাবি রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণে তাদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। ডাকাত সদস্য যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা পুরাটাই শেখানো বলে দাবি তাদের। ওসির সাথে বিরোধের কারণে এমন শেখানো বক্তব্য ডাকাত সদস্য দিয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

এর আগে গত শুক্রবার ডাকাতির ভাগ দিতে হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। এদের মধ্যে আবার দুইজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর এমনই তথ্য দিয়েছে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের এক সদস্য। এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে তোলপাড় শুরু হয়।

বরিশালের উত্তর-পূর্ব সীমানার মেহে‌ন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলায় বছর জুড়েই ঘটে ডাকাতির ঘটনা। সম্প্রতি এই ডাকাতদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে নামে পুলিশ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রেপ্তার হয় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৬ সদস্য। এদের দেয়া তথ্যে গত ৭ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হয় ডাকাত সর্দার নাঈম দেওয়ান। মেহেন্দীগঞ্জের দড়ির চর খাজুরিয়া ইউনিয়নের বা‌সিন্দা নাঈম দেওয়ানের বিরুদ্ধে বরিশালের বিভিন্ন থানায় হত্যা ও ডাকাতির মোট ১৪টি মামলা রয়েছে।

সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের গডফাদার হিসেবে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৫ নেতার নাম প্রকাশ করেছে নাঈম। নাঈম‌কে গ্রেপ্তারের ঘটনায় মেহেন্দিগঞ্জে যান বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন। তার উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয় ডাকাত সর্দার নাঈমকে। সেসময় নানা প্রশ্নের উত্তরে সবার সামনে আবারও ডাকাতের গডফাদার হিসেবে ওই পাঁচ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতার নাম বলে নাঈম। গোপনে ধারণ করা এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছড়িয়ে প‌রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নাম উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদে‌র অভিভাবক বলছে নাঈম। এসব নেতাদের নিয়মিত ডাকাতির ভাগ দেয়ার পাশাপাশি মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিতে হয় এমন কথোপকথনও ছড়িয়ে পড়ে ওই ভিডিওর মাধ্যমে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়ে ওঠে মেহেন্দিগঞ্জে। কেননা ভিডিওতে যাদের নাম বলা হয়েছে তারা সবাই সেখানকার ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।

গডফাদার হিসেবে যাদের নাম এসেছে তাদের একজন দড়িরচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাম দেওয়ান, ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য শহীদ দেওয়ান এবং  ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগ গ্রুপের সমর্থক মোশাররফ আকন। এই তিনজন ছাড়াও নাঈমের দেয়া স্বীকারোক্তিতে আরো দুইজনের নাম এসেছে ডাকাতের গডফাদার হিসেবে। এরা হল বাচ্চু এবং কাশেম দেওয়ান। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে জড়িত এই দুইজন অবশ্য দলীয় কোন পদ-পদবীতে নেই।

এসব বিষ‌য়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ডাকাত নাঈমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়নি। রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। রিমান্ডে পাওয়া গেলে হয়তো অভিযোগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাবে। তিনি রবিবার সন্ধ্যায় বলেন বিষয়টি তদন্তাধীন। এ বিষয়ে এখন আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh