তারিক আল বান্না
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:১৩ পিএম
মরক্কো নিজেদের বিশ্বকাপের সেরা সাফল্য অর্জন করেছে এবার। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে কখনো আফ্রিকান দেশ সেমিফাইনালের টিকিট পায়নি। এবারের কাতার আসরে ‘আটলাস লায়ন্স’ খ্যাত মরক্কো সেমিফাইনালে ওঠে এবং ১৭ ডিসেম্বর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ১-২ গোলে হেরে চতুর্থ স্থান লাভ করে।
ফলে বাংলাদেশের মতো লাল-সবুজের দেশ মরক্কো নিজেদের বিশ্বকাপের সেরা সাফল্য অর্জন করেছে এবার।
অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে মরক্কো অনেক শক্তিশালী দলকে টেক্কা দিয়ে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বকাপের সঙ্গে নিজেদেরকে জড়িয়ে রাখতে সক্ষম হয়, অর্জন করে বিশ্বের কোটি কোটি সমর্থকদের ভালোবাসা। এবারের সাফল্য ধরে রেখে তারা আগামীতে বিশ্বকাপে আরও বড় অর্জনের দিকে চোখ রাখতে বদ্ধপরিকর।
একবার আফ্রিকান নেশন্স কাপ, দুই বার আফ্রিকান নেশন্স চ্যাম্পিয়নশিপ এবং একবার ফিফা আরব কাপের শিরোপা জিতলেও এবারের আগে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মুখ দেখেনি। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপে মরক্কো নক-আউট পর্বে উঠে ইতিহাস সৃষ্টি করে। ১৯৯৮ সালে ফিফা র্যাংকিংয়ে দশম স্থানে উঠে অর্জন করে আরেক সাফল্য। বর্তমানে তারা ফিফা র্যাংকিংয়ে রয়েছে ২২ নম্বরে।
হয়তো এবারের সাফল্য তাদের বিশ্ব র্যাংকিংয়ে অবস্থান আরও উপরে নিয়ে যাবে।
১৯২৮ সালে মরক্কোর প্রথম জাতীয় ফুটবল দল গঠিত হয়। ১৯৬০ সালে মরক্কো ফিফার সদস্যভুক্ত হয়। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে মরক্কো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়, যেখানে গ্রুপের অপর তিন দল ছিল শক্তিশালী পর্তুগাল, ১৯৬৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এবং পোল্যান্ড। সেবার মরক্কো ৩-১ গোলে পর্তুগালকে পরাজিত করে চমক দেখায়। ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফুটবলে মরক্কোর বাজে সময় অতিবাহিত হয়। ২০১৮ সালে মরক্কো ফের বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠে।
সেবার তারা গ্রুপপর্বে ০-১ গোলে ইরানের কাছে, ০-১ গোলে পর্তুগালের কাছে হেরে গেলেও শেষ ম্যাচে শক্তিশালী স্পেনের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করতে সক্ষম হয়। ২০১৮ সালে মরক্কো প্রথম বারের মতো আফ্রিকান নেশন্স চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে। ২০২০ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আফ্রিকান নেশন্স চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা লাভ করে জানান দেয় তাদের দক্ষতা।
এবারের বিশ্বকাপে মরক্কো শুরু থেকেই অসাধারণ নৈপুণ্য দেখাতে থাকে। প্রথম ম্যাচে মরক্কো ২০১৮ সালের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। দ্বিতীয় ম্যাচে মরক্কো ২০১৮ সালের তৃতীয় স্থান অধিকারী ইউরোপের শক্তিশালী দল বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়ে চমক দেখায়। এরপর তৃতীয় ম্যাচে কানাডাকে ২-১ গোলে পরাজিত করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক-আউট পর্বে ওঠে।
শেষ ষোলো পর্বে মরক্কো নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলে ১২০ মিনিট দারুণ খেলে ম্যাচ গোলশূন্য রাখতে সমর্থ হয় ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন শক্তিশালী স্পেনের বিরুদ্ধে। পরে টাইব্রেকারে গোলকিপার ইয়াসিন বোনাউর দক্ষতায় স্পেনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শেষ আটের টিকিট পেয়ে যায়।
শেষ আটে মরক্কো ১-০ গোলে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দল পর্তুগালকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে উঠে আরেক ইতিহাস গড়ে। আফ্রিকা ও আরব দেশগুলোর মধ্যে মরক্কোই প্রথম দল হিসেবে শেষ চারের টিকিট লাভ করার কৃতিত্ব দেখায়। সেমিফাইনালে শক্তিশালী ফ্রান্সের কাছে ০-২ গোলে হারলে মরক্কোর স্বপ্নযাত্রা থেমে যায়।
ওয়ালিদ রেগরাগুইর অসাধারণ কোচিংয়ে মরক্কো এবার বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখল। ওয়ালিদ ছাড়াও মরক্কোর কোচিং স্টাফে আরও যারা স্বদেশি ছিলেন তারা হলেন সহকারী দুই কোচ রাশিদ বেনমাহমুদ ও ঘারিব আমজিন, গোলকিপিং কোচ ওমর র্হারাক এবং ভিডিও অ্যানালিস্ট মুসা আল হাবাচি।
এছাড়া ফিটনেস কোচ ছিলেন স্পেনের এদু গসজালেজ এবং টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বেলজিয়ামের ক্রিস ভ্যান পুভেলদে। এবারের বিশ্বকাপ ছাড়াও মরক্কো আফ্রিকার নানা ধরনের ফুটবল আসরে অনেক সাফল্য পেয়েছে।
এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অনেক সাফল্য ছাড়াও মরক্কো তাদের ফুটবল ইতিহাসে কমবেশি জয় পেয়েছে বেলজিয়াম, চিলি, ডেনমার্ক, সাবেক পূর্ব জার্মানি, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রুমানিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, কানাডা, কোস্টারিকা, জ্যামাইকা, নিউজিল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে। এবার বিশ্বকাপে মরক্কো শিরোপা জিতলে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। কারণ সেমিফাইনালিস্ট চার দলের যে কেউ শিরোপা জেতার মতোই ক্ষমতা রাখে। আগামীতে মরক্কো তাদের সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।