কাঠ পুড়িয়ে চলছে ইট তৈরি

জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:২২ পিএম

জামালপুরের ইটভাটা। ছবি: প্রতিনিধি

জামালপুরের ইটভাটা। ছবি: প্রতিনিধি

জামালপুরে অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও লাকড়ি। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে এ শিল্প। তবে ভাটা মালিকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে জ্বালানি সংকটে অধিকাংশ ভাটা বন্ধ রয়েছে, কোথাও কোথাও বাধ্য হয়ে পোড়ানো হচ্ছে লাকড়ি।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্র জানায়, জামালপুরে ৮০টি ইটভাটা রয়েছে, সদর উপজেলায় একটি অটো ইটভাটা রয়েছে। গত মৌসুমে ভাটা মালিকরা ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত জ্বালানি (কয়লা) টনপ্রতি ১৬-১৭ হাজার টাকায় ক্রয় করলেও চলতি মৌসুমে আমদানি সংকট রয়েছে। এরপরও যা পাওয়া যাচ্ছে তার জন্য টনপ্রতি ২৮-৩০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।

বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার সামনে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। ভাটার সামনে সারিবদ্ধভাবে কাঁচা ইট বানিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে। জ্বালানি হিসেবে মাহিন্দ্র ট্রাক্টরযোগে আনা হচ্ছে লাকড়ি। কোনো কোনো ভাটার সামনে লাকড়িগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কোথাও লাকড়ি পোড়ানো এবং কোথাও লাকড়িতে আগুন দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

জামালপুর পরিবেশ আন্দোলনের নেতা জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জেলার শতাধিক ইটভাটার অধিকাংশগুলোতে কয়লার পরিবর্তে কাঠখড়ি পুড়িয়ে ইট তৈরি হচ্ছে। এতে একদিকে পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে, অন্যদিকে ইটের মান ঠিক থাকছে না। অবিলম্বে এটি প্রতিরোধে তিনি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্টার ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, কয়লার দাম বেশি, আগে এক টন কয়লা কিনতে খরচ হতো ২৫-২৬ টাকা, এখন লাগে ৩০-৩২ হাজার টাকা। এখন একটি ইট তৈরিতে খরচ পড়ে ১১ থেকে ১২ টাকা। তাই অনেকে কয়লার পরিবর্তে লাকড়ি ব্যবহার করছেন। এখন যে পরিস্থিতি তাতে ভাটা চালানোই দায়। ডলার সংকটে এলসিও করা যাচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে তাদের পক্ষে ভাটা চালানো সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।

নাজ ইটভাটার স্বত্বাধিকারী সৌরভ মিয়া জানান, কয়লা সংকটের কারণে এখনো ভাটা চালু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এখন ইট তৈরি করলে প্রতি ইটে খরচ হবে ১৫-১৬ টাকা। তাই তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কাঁচা ইট বানিয়ে রাখা হয়েছে, জ্বালানি সংকটের কারণে এখনো আগুন দিতে পারেননি। তবে প্রস্তুতি চলছে।

জ্বালানি মূল্য না কমলে কারও পক্ষেই ইটভাটা চালানো সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি। আবির ইটভাটার শ্রমিক কামাল, হুমায়ুন কবির, আলহাজ, সুজনসহ আরো অনেকে জানান, প্রায় ১৫ দিন আগে এ ভাটায় আগুন দেওয়া হয়েছে। কয়লা সংকটের কারণে লাকড়ি দিয়েই আগুন ধরানো হয়েছে। তারা তিন সপ্তাহের অধিক সময় ধরে এখানে কাজ করছেন। উৎপাদনের ওপর তারা মজুরি পান।

জামালপুর জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন খান মুঠোফোনে বলেন, জেলার অধিকাংশ ভাটাই বন্ধ, এখনো কাজকাম শুরু হয় নাই, বসে আছে ভাটার মালিকরা। ১০-১২টার মতো ভাটা চালু থাকলেও তাদের অবস্থাও নাজুক।

যে কয়টা ভাটা আছে সবই কয়লা পুড়িয়ে ইট হয়। কিন্তু বর্তমানে কয়লার ব্যাপক সংকট, ঠিকঠাকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না, যাও পাওয়া যাচ্ছে দাম অনেক বেশি। কয়লার পরিবর্তে লাকড়ি ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইট বানানোর জন্য লাকড়ি চলে না।

যদিও দুই চারজন তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এটি ব্যবহার করছেন। তবে কয়লার পরিবর্তে লাকড়ি ব্যবহার করলে ইটের রং ভালো হয় না, ইটের মান ঠিক থাকে না। কয়লার সংকট থাকয় অনেকে লাকড়ি দিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (উপসচিব) দিলরুবা আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, কিছুদিন আগে জেলার সকল ভাটা মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। এ সভায় তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভাগে একজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন, তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কিছু ইটভাটা ভাঙাও হয়েছে। লাকড়ি পোড়ানো প্রতিরোধ ও পরিবেশ রক্ষায় এ অভিযান চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh