সময়ের পঙ্ক্তিমালা

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:০৮ পিএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:১২ পিএম

কবিতা। প্রতীকী ছবি

কবিতা। প্রতীকী ছবি

কচি রেজা 
কনফেশন  

ভোরবেলায় আমার রুমে রোজই বাজেন রবীন্দ্রনাথ।
জেনেছি, চলাচলের সে মানুষগুলো, দৃশ্যমান যাদের খিদে।
সে খিদে  রবীন্দ্র সংগীত শোনেনি কোনোদিন।
সে জগতে শিশুর ফোঁপানি, মাটিলগ্ন মেয়েটির নুইয়ে পড়া,
কান্না নিয়ে যেদিন সন্ধ্যাটা যার জ্বলে ওঠেনি আর। 
কনফেশন করতে দাও হে, পাপের কিংবা ওল্ড ম্যান অ্যান্ড
দ্য সি’র মৃত তিমির অভিমানের। জন্মদিন উদযাপিত হোক
কনফেশনের। 
জন্মদিন হোক অজস্র ভূমি কন্যার।

হাসান রনি
এ সন্ধ্যায় 

হাওয়ার পাশে বসে যার কোনো হাত নেই
পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের তলে উধাও হয়ে যায় 
জটলা বাঁধা পাখিদের চোখে লণ্ঠন জ্বেলে আহার করে 
আমার গোরস্থানের ভেতর জমে থাকা আলো 
যেন কোথাও শিশুরা ভরছে 
তার হাত জামার ভেতর 
এ সন্ধ্যায় 
আমার  কাছে এ পৃথিবী হয়ে ওঠে পুরোটা বন 
বের করে দেয় পাখিদের 
গাছে গাছে ঘর্ষণের সংগীত 
পাখির বুকের মতো নৌকোর নিচ 
শুধু কেটে ফেলে আমার মৈনাক শরীর।

দ্বিত্ব শুভ্রা
তুমি কি তোমার বক্সটা দেখতে পাও 

শ্বাসকষ্ট হচ্ছে লেমিনেটেড হওয়া কাগজটার 
পার্টনারের পাশে ভান করে থাকা বালিশটার
জানালা আছে আর পা দুটো
কোনোরকমেই পারে না গ্রিল বাঁকাতে।
ছোট ছোট ক্রোধ, 
গোল মরিচের সাইজ উত্তেজনা
যেমন মজে যায় সয়াসস
তেমনই আমি-
স্টাফড করা মাংস।
এসব বলি না কাউকে। ‘হাংরি নাকি’র ব্যাগে, অচেনা রাইডারের পিঠে,
এসএ পরিবহনের বক্স ভ্যান, আমি কেবল ডেলিভারি ম্যান,
অমত করছি না, অমত করছি না: জীবন আনন্দ ফ্লোরে ছেটানো না,
কখনও কখনও আমিও পাই, পাঁচ দিনের পুরানো ফ্লাওয়ার বুকে।

সোয়েব মাহমুদ
আছিতো 
আমি আছি, আমি আছি সেখানেই যেখানে রেখে 
গিয়েছিলে তুমি। ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টিতে পুড়ছি রোদে ভিজছি,
হাতঘড়ি সাথে নেই সময় বলতে পারছি না।
আমাকে ছাড়িয়ে দীর্ঘ হয়ে যায় ক্যালেন্ডারের দিন। 
আমাকে মাড়িয়ে হেঁটে যায় আমাদের ছায়া, বিগত দিনের ছায়া।
আমি, আমি বুঝতে পারি না, আজও 
আজও বুকপকেটে.. নাহ, আমার তো শার্টের বুকপকেট থাকে না।
এ জীবনে ধরে রাখতে পারিনি কিছুই। শুধু হাত ফস্কে যায় আঙুলের ফাঁক গলে ঝ’রে পড়ে রক্তজবা ফুল। 
আমি, আমি দাঁড়িয়ে, আছি-আছি ঠিক সে জায়গায় 
যেখান থেকে চলে যায় একটা সন্ধ্যা-বেওয়ারিশ জীবন থেকে হেঁটে বেড়িয়ে যায় একটা রাত একটা চার শব্দের গান।
মাছগুলো মরে গিয়ে ডাঙ্গায় ভ্রমণপিপাসুদের ইতিহাস 
বলে যায় অনবরত। মূখরা রমণীদের মতন তীব্র 
ছোটাছুটির জিভ, বেদনার্ত মাঝরাতনীল অবয়বে কোনো কোনো কথা বলতে গিয়ে মাতাল হয়ে যায়।
আমি আছি, আমি আছি সেখানেই, যেখানে রেখে গিয়েছিলে তুমি।

শুভ্র সরকার
আড়াল
যতদূরে চিত্রকরের রেখা নীল
অসুখের হাত, যেন ঠিক
বিষণ্নতার দিকে আগ বাড়ানো
হেঁটে চলা আমারই গান
মন বলে শেষবিকেল
ঘনিষ্ট দুপুরে পড়ে আছে আত্মহত্যার কিছু দাগ
এইসব ভেবে ভেবে কখনো
কখনো মনে করিও তুমি আমারই নাম
ছুরির শহরে হারিয়ে ফেলেছো
প্রতারক আমায়
আর হাওয়া ঘূর্ণায়মানে
কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিয়ে ফিরছো পাখিঘ্রাণ

রিমঝিম আহমেদ
ভ্রমর

অস্পষ্ট দুটো মানুষ কিছু কিছু কথা জমা রাখে
পরস্পরের কাছে। সামান্যই বাঁধন, ঢিলেঢালা 
যেন ইচ্ছে করলে আলগা হতে পারে। চোখ জ্বালা
করার আগেই ঢাকা যায়, চতুর হাসির ফাঁকে 

নদী-বাদাড়ে গোধূলি গলে পড়ে, রক্তকান্না বুকে
কে কাকে ডাকছে কাছে! সচকিতে-ভ্রমর ভ্রমর! 
গোটানো হাতের গান বেসুরো বাজায় কালজ্বর
শরীরে মাঠের টান, ঘাস কাঁপে হাওয়ার অসুখে

বিমূঢ় মৌনের ফুল নড়ে নড়ে কত কথা বলে!
হৃদয়ের জাত নেই, ধর্ম নেই-সে জন্ম নাস্তিক 
সূর্যস্নাত তপ্ত প্রেম অন্ধকারে আগুন অধিক
রাতের বর্ষার মতো মুখরিত, বজ্রমতো জ্বলে 

মেঘের দুপুর, পথে পথে গুমরে মরছে কেকা 
অস্ফুট কথার ফাঁকে নদী মরে, জাগে চররেখা

সালাহউদ্দিন ফিরদাউস
জুনিপার

জুন মাসের সে দিনগুলো কই?
অলোকলতার মতো রোদ পিছলে উঠে যাবে সুউচ্চ
নীলে মেঘের দরবারে;
পক্ষীরাজ বা দেবতার অবয়বে দূরে রয়ে যাবে

আকাশ—উঁচুতে আরেক আসমানে যেন।
বিকেলে রোদ মেখে যাবে ক্লান্তিছাপা শাড়ির মতো—এমন সেসব দিন
আর আসবে না? আনবে না?

তুমি তো চেয়ে আছো-
জুনিপার-ঝাড়ে-হঠাৎ-বিটপী-একা অমোঘ নীলিমায়
মধুকরের মৃত্যুজন্মপূর্ব
ম্যাগনোলিয়া
ও ভিনশাখা ফুল,
তুমি আর আনবে না? আসবে না?

চোখের আফসোসের মতো জেগে রইলে
বুকের তিলের মতো ঘুমিয়ে থাকলে
মনের ভুলের মতো ডেকে উঠলে
শিকড় গুটিয়ে নিলো আরাধ্য চারা
আহা, ভিনশাখা লিয়া!
বৃষ্টি নামলো, মেঘ ঘনালো
পশ্চাতে হেসে ফেললো জুনের বিকেল
শান্ত দিনের মতো মুছে গ্যালো সহপাঠিনীর মুখ
আর তুমি—শুদ্ধস্বর, রুদ্ধ-হাসি,
জুনিপার
বেদনাহীন দুর্মর—
আকাশের দিকে মুখ ক’রে কে ডেকে উঠলো তোমায়!

মনোজিৎ মিত্র 
ছন্নছাড়া
যে ভার তুমি বইতে পারো না সেই হৃদয়, আমারে দিয়ো না আর
রাখো নিজের কাছে। যেভাবে আগলে রাখো দেহ, স্মৃতি, সাময়িক
বসে থাকো স্থির খোলা রেখে চুল, ভেতরের কথা আর কে জানে
পুষে রাখো মনে মায়া, বোনো জাল বিরহে। আবছা তোমারে দেখি
মানুষ যেভাবে বাঁচে, সে আবার বাঁচা নাকি? আসো সোনাপাখি—
ছড়ায়ে দিয়ে পরান, আমরা বকুলের ডালে বসে ফল-ফলালি খাই।

শাফিনূর শাফিন 
আমাদের প্রতিবাদগুলো যেমন হয় 

আমরা হাঁটি মানে হাঁটতে চাই 
মিছিলে মিছিলে, শ্লোগানে শোরে 
খুব একটা সূর্য মাথার উপর না নিয়ে 
বিকেলের দিকে বরং 
রাস্তার সহজ পাশে বেড়াল পায়ে হেঁটে টেটে 
করাই  যায় এসব মৃদুমন্দ (প্রতিবাদ) 
যেন গোলাপি হাওয়াই মিঠাই 
জিভে নিতে না নিতেই নাই 
হয়ে হয়ে গলে গলে  মিলিয়ে  যায় 
উদযাপনের ঠাট্টায়, গানে, 
প্রোফাইলে, বাইটে, ঘুমে ঘুমে-
আমাদের প্রতিবাদগুলো কবেই হয়ে গেছে 
পাউরুটির উপর মাখানো জেলি মাখন

শৈবাল নূর
আতিয়া

আত্মলুপ্তির দিন শুরু হলো
শৈলখণ্ডের মাথা রেখে ঘুমিয়েছে পাহাড়ি ট্রেকার
তার উচ্চতা জয়ের আকাক্সক্ষায়
আমি লেলিয়ে দিয়েছি মোহমুক্তির গুপ্তসংকেত, নীরব দুর্ভিক্ষ
চূড়ায় উঠলে বোঝা যায়
কীভাবে দীর্ঘপতনে পাথর পায় ডিম্ব-কায়া
মহাশূন্যের খোঁজে, পরিভ্রমণে
আতশবাজির মতো ঝরে যাবো একদিন
অ-অনূদিত তোমার সমস্ত সত্তায়, পাপড়িরাগে

দিপংকর মারডুক
পরিত্যক্ত রোদের দৃষ্টি

অসম্পূর্ণ অন্যমন, সান্দ্রতা নিয়ে স্থির হও
পাথর গেছে অনুত্তাপ মলিনের প্রতিমুহূর্তে
নিবিড় যার শিউলিগাছ, পরিচিত হাওয়ারা ওড়ায় অমিত ধুলো
আমি যেন উন্মোচিত মেঘদল
নিস্পৃহ তোমার মন সম্পূর্ণ সহজ কুড়িয়ে তোলো
বালিতে নিমগ্ন করো পাহাড়তলী, অন্তরালের শঙ্খচিল;
মাটি কী তোমার তীব্রতা? আমগাছটির অনিবার্য সোপান
শোনো তবে শহর নয়-একাগ্র বর্ষারূপ,
যেখানে পরিত্যক্ত রোদের দৃষ্টি থেকে শাঁখ বাজে যথার্থ-
এই কোন ছায়া, দূর গাঁয়ের গোলকধাঁধায় মহিষের উনুন
বৃক্ষের বিচ্ছেদ আজ বজ্রাহত
জল জননীর ফিতা থেকে কেন লাগে লাবণ্য ইছামতি
ঘোড়া
তবুও পার করে ক্ষুধার্ত হৃৎপিণ্ডের গিরিপর্বত

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh