প্রাথমিকের সহকারীরা দশম গ্রেড কেন পাবেন না?

হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০১:০৭ পিএম

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

বাংলাদেশের বিস্তৃত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সামাজিক অবস্থান আর মর্যাদা এখন এক বড় সমস্যা। সংখ্যায় নগণ্য নন তাঁরা, তবুও সমানভাবে গণ্য নয় তাঁদের স্বাভাবিক অধিকার। কিন্তু কেন? সন্দেহ নেই যে গত পাঁচ দশকে তাঁরা শুধু শিক্ষা বিস্তারই নয়, সামাজিক উন্নয়ন তথা সরকারের নানা দায়িত্ব পারদর্শিতার সঙ্গে সম্পাদন করে চলেছেন। কিন্তু এ রাষ্ট্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আজও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাকেন উপেক্ষিত।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ন্যায় একই যোগ্যতা(স্নাতক), একই কারিকুলাম, একই সি‌লেবাস ও একই শিক্ষার্থী‌দের নি‌য়ে কাজ করা পি‌টিআই–সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যাল‌য়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড দশম (দ্বিতীয় শ্রেণি) আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম (তৃতীয় শ্রেণি)। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের প্রতি কেন এ বিমাতাসুলভ আচরণ? কেন অন্য ডিপার্টমেন্ট ও প্রাথমিকের সহকারীদের মধ্যে গ্রেডের পার্থক্য থাকবে? সূর্যের আলোয় সবার যেমন সমান অধিকার, তেমনি বেতন গ্রেডের অধিকারও সবার জন্য সমান হওয়া বাঞ্ছনীয়।

স্নাতক যোগ্যতায় সরকারের অন্য বিভাগে এখন দশম গ্রেড বিদ্যমান। যেমন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, প্রদর্শক-কলেজ, সহকারী গ্রন্থাগারিক/ক্যাটালগার, পুলিশের উপপরিদর্শক, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইত্যাদি। ডিপ্লোমা ইন নার্সিং যোগ্যতায় দশম গ্রেডে রয়েছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স/স্টাফ নার্সরা। এ ছাড়া কৃষি ডিপ্লোমা যোগ্যতায় দশম গ্রেডে রয়েছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা/উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা/উপসহকারী প্রশিক্ষক/উপসহকারী সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তা।

সুমহান এ পেশা কেন আমাদের দৃষ্টির আড়ালে পড়ে আছে, তা ভাবতে গিয়ে লজ্জা বোধ করছি। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরন্তর চেষ্টায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার প্রথম সোপান এবং ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, যা সোনার বাংলা গড়ার দ্বিতীয় সোপান। বিষয়টি নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। কিন্তু সরকারি অন্য পেশাজীবীর তুলনায় প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা আর কত পিছিয়ে থাকবেন?

যে সমাজ শিক্ষকের মর্যাদা দিতে পারে না, সেই সমাজের জন্য এটি দুঃখজনক। কর্তৃপক্ষ বরাবর কেন নির্বিকার, নিশ্চুপ? প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের প্রাণের দাবি দশম গ্রেড বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে শুরু হোক মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর হওয়ার যাত্রা।

হুমায়ুন কবির, সহকারী শিক্ষক, 
কন্দর্পপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, ময়মনসিংহ।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh