নতুন বছর হোক দুর্দশা থেকে মুক্তির

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৫৪ এএম

সম্পাদকীয়। প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়। প্রতীকী ছবি

২০২২ সালটি ছিল আর্থিক খাতে অনিশ্চয়তা, বিপর্যয় এবং সংগ্রামের বছর। করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে অর্থনীতিতে উত্তরণের আশাবাদ নিয়ে যে বছরটি শুরু হয়েছিল, নজিরবিহীন ডলার ও রিজার্ভ সংকট, অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণ ও গুজবে তা হয়ে ওঠে নাজুক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারাবিশ্বের মতো টালমাটাল করে তোলে আমাদের অর্থনীতিকেও।

ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা ও অনিয়মের ঘটনা সবকিছু আরও জটিল করে তোলে। এই সংকটকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় বলেও অভিহিত করা যায়। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সামনে আরও কঠিন সময় আসছে বলে সতর্ক করে দেন। সে হিসেবে নতুন বছরে মানুষ আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে কিনা তা নিয়েও এক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

২০২২ সালে স্বস্তিতে ছিল এমন কোনো খাতই নেই। তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পুরোটা সময় জুড়েই ছিল অস্থিরতা আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশিরভাগই গ্যাস ও ডিজেলচালিত হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও গ্যাস ও ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমাতে হয়। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ঠিকই দিতে হয় সরকারকে।

এসব কারণে প্রকট হয় লোডশেডিংও। সরকারের তরফ থেকে শিডিউল করে লোডশেডিং দেওয়া হয়। কিন্তু সেই শিডিউলও শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকেনি। সরকারঘোষিত শিডিউলের বাইরেও ব্যাপক লোডশেডিং হয়। 

২০২২ সালে নিত্যপণ্যের বাজার নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য ছিল এক আতঙ্কের বিষয়। দাম বাড়ার পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে বেশি ভুগিয়েছে ব্যবসায়ীদের অবৈধ সিন্ডিকেট। সরবরাহ বন্ধ রেখে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াতে সরকারকে রীতিমতো বাধ্য করেছিল ব্যবসায়ীরা।

এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। এতে ভয়াবহ চাপ পড়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। বছরের মাঝামাঝি হু-হু করে কমতে থাকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রিজার্ভে টান পড়ায় সৃষ্টি হয় চরম ডলার সংকট। ৮৫ টাকার ডলার ওঠে ১২০ টাকায়। এই রকম একটা অস্থিরতার মধ্যেই আসছে নতুন বছর। 

কিন্তু ২০২৩ সাল কি শুধুই দুর্দশাগ্রস্ত হবে, নাকি আশার আলোও কিছু আছে তা খুঁজে দেখা যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হতে পারে। আমরা আশা করব, সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংকটে সাধারণ মানুষ যে নিষ্পেষিত হচ্ছে তার থেকে কিছুটা মুক্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ বছর একাধিক মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন হতে পারে। এতে উন্মোচিত হবে দেশের চলমান উন্নয়নের নতুন রূপ।

খুব বড় কোনো প্রত্যাশা নয়, নতুন বছরে মানুষের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাগুলোর জোগান নিশ্চিত হোক। মানুষ থাকুক স্বস্তিতে, নিরাপদে। বিদায়ী বছরের শেষ কয়েক মাস রাজনৈতিক অঙ্গন অনেকটাই উত্তপ্ত। আমরা আশা করব শিগগির এর অবসান হবে।

সবাইকে নতুন বছরের অগ্রিম শুভেচ্ছা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh