ময়মনসিংহের ২৬ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদে তোড়জোড়

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:৩০ পিএম

জমি অনাবাদি থাকার সবচেয়ে বড় কারণ জলাবদ্ধতা, কৃষকদের অনাগ্রহ। ছবি: প্রতিনিধি

জমি অনাবাদি থাকার সবচেয়ে বড় কারণ জলাবদ্ধতা, কৃষকদের অনাগ্রহ। ছবি: প্রতিনিধি

ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় অনাবাদি জমির পরিমাণ ২৬ হাজার হেক্টরের উপরে। এসব জমি চাষের আওতায় আনতে নানা তোড়জোড় চালাচ্ছে প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা জাতের ফসল উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করছে। 

তবে কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের অনাবাদি সব জমি চাষের আওতায় আনতে হলে কৃষককে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য, উন্নত চাষ ব্যবস্থা, সেচ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬ হাজার ৪০১ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে চাষের আওতায় আনা যাবে ৮ হাজার ৪২৯ হেক্টর। অনাবাদি জমির মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় অনাবাদি ৩ হাজার ১০১ হেক্টর, চাষের আওতায় আনা যাবে ২ হাজার ৪৮০ হেক্টর। জামালপুরে অনাবাদি ৬ হাজার ৭২৬ হেক্টর, চাষের আওতায় আনা যাবে ৪ হাজার ৩৫ হেক্টর। শেরপুরে অনাবাদি ১ হাজার ৬০১ হেক্টর, চাষের আওতায় আনা যাবে ৪০০ হেক্টর। নেত্রকোনায় অনাবাদি জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৯৭৩ হেক্টর, চাষের আওতায় আনা যাবে ১ হাজার ৫১৪ হেক্টর। তবে নেত্রকোনায় বেশিরভাগ জমি হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলে হওয়ায় অধিকাংশই চাষের আওতায় আনা সম্ভব নয়।

কৃষকরা যেসব জমিতে ধান ফলাতে পারছে না সে সব জমিতে অন্য ফসল রবি শস্য ফলানোর কথা জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। সে লক্ষ্যে কৃষকের সমস্ত জমি কীভাবে চাষের আওতায় আনা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ লক্ষ হেক্টরের অধিক কৃষি জমি রয়েছে। এর মধ্যে বোরো আবাদ হয় প্রায় ৬ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে এবং আমান আবাদ হয় ৬ লাখ ২ হাজার জমিতে।

সব মিলিয়ে মৌসুম অনুযায়ী ২৬ হাজার হেক্টরের উপরে জমি অনাবাদি থাকে। সবচেয়ে বেশি অনাবাদি জমি নেত্রকোনা জেলায়। অনাবাদি থাকার মূল কারণ হচ্ছে নিচু জমি, পাহাড়ি জমি, জলাবদ্ধতা এবং সেচ সুবিধা না থাকা। পাহাড়ি অঞ্চলে জমি আবাদের আওতায় আনতে সেখানে করলা, ঝিঙা এবং চিচিঙ্গা চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর সুফলও আস্তে আস্তে আসতে শুরু করেছে। 

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, ময়মনসিংহ জেলায় অনাবাদি জমি রয়েছে ৩ হাজার ১০১ হেক্টর। এর মধ্যে আমরা ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছি। জমি অনাবাদি থাকার সবচেয়ে বড় কারণ জলাবদ্ধতা, কৃষকদের অনাগ্রহ। সেখান থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায় সেই পরামর্শ আমরা কৃষকদের দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কোনো জমি অনাবাদি থাকবে না। 

অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে খুব সহজ হবে না জানিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এগ্রিকালচারাল ইকোনমিক বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকির আজমল হুদা বলেন, কৃষি জমি শতভাগ চাষের আওতায় আনতে সরকারের উদ্যোগ সময় উপযোগী।

তবে এ কাজটি খুব সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। এর আগেও কৃষককে প্রণোদনা, সার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এনেও কোনো লাভ হয়নি। এখন যদি ইচ্ছে করে স্বল্পমূল্যে সার, বীজ এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সরকার নিশ্চিত করতে পারে তা হলে কিছুটা সম্ভব অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য। 

তিনি আরও বলেন, এখন কৃষকের হাতে উন্নত প্রযুক্তি যাচ্ছে, তা ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে। কৃষককে কৃষি কাজে মনোযোগী করতে কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করলে সরকারের চিন্তাভাবনা সফল হবে। 

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বলেন, আমাদের এলাকা পাহাড় বেষ্টিত। সেখানে একসময় ফসল হতো না বললেই চলে। এখন কৃষি বিভাগের লোকজনের উৎসাহে সেখানে আনারস, সবজি এবং হলুদ চাষ হচ্ছে। আমরা বছরে সেখান থেকে মোটামুটি ভালো টাকা আয় করতে পারছি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh