বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৪৪ পিএম
ফসল ঘরে তুলছেন এক কৃষক। ছবি: প্রতিবেদক
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বাজারেও এবার ধানের ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তারা।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বছর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ছয় লাখ ৯৯ হাজার ১১২ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এতেই ১০ লাখ ৩১ হাজার ৩৫১ টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
গত বছর এই বিভাগে ছয় লাখ ৯৯ হাজার ১১২ লাখ হেক্টরে আমন আবাদ করে মোট চাল উৎপাদন হয়েছিল ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ টন। এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় উৎপাদন গত মৌসুমের চেয়ে আরো বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষকরা জানান, চলতি বছর আমন আবাদ মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও অতিবর্ষণের ফলে আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন তারা। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের বৃষ্টিতে তাদের ভাগ্যের উন্নতি হয়েছে।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কৃষক মাসুদ মিয়া বলেন, এবার সাড়ে তিন একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছিলাম। এতে প্রায় ৬৫ মণ ধান পাবো বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, এবার বাজারে দামও ভালো। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগেই আবাদ হওয়ায় বাড়তি ব্যয় হয়নি। কিন্তু সামনে বোরো এবং আগামী আমন মৌসুমে উৎপাদন ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে বলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ধান ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে এবার আমন ধানের দাম বেশ ভলো। প্রতি মণ ইরি ধান এক হাজার ৪০ টাকা এবং গুটি স্বর্ণা এক হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বরিশালের আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবার সরকার আমন মৌসুমে ২৮ টাকা কেজি দরে ধান কিনবে। এজন্য ধানের দাম বাজারে ভালো পাচ্ছে কৃষক। সরকারিভাবে এ অঞ্চল থেকে ধান ও চাল দুটোই সংগ্রহ করা হবে।
এদিকে, আমন ধান উঠতে শুরু হওয়ার পর বরিশাল অঞ্চলের বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে চালের দামও। খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি চালের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা করে কমেছে।
বরিশালের পাইকারি চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা আমন চাল ৫০ কেজি প্রতি বস্তা দুই হাজার ৬৫০ টাকা, কাজলা আমন দুই হাজার ২৫০ টাকা, দুধ কলম দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা দরে প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর পাইকারি বাজার ফড়িয়াপট্টির হাওলাদার বাণিজ্য কেন্দ্রের চাল ব্যবসায়ী সোহরাব হাওলাদার বলেন, নতুন চাল বাজারে আসার পর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
খুচরা বাজারে আমন মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৮ টাকা, কাজলা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে যা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতো।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ফজলুল হক বলেন, গত অক্টোবর মাসে বৃষ্টি কম থাকায় তখন আমন ধানের চারা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষকরা। কিন্তু ওই মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় ধানের চারার জন্য ছিল আশীর্বাদ। সময়মতো পানি পেয়ে এবার ধানের বাম্পার ফলন ভালো হয়েছে।