কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৩৬ পিএম

বঙ্গভবন। ছবি: ফাইল

বঙ্গভবন। ছবি: ফাইল

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এপ্রিলে। সংবিধান অনুযায়ী, তৃতীয় মেয়াদে তার আর রাষ্ট্রপতির পদে থাকার সুযোগ নেই। ফলে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।

তাহলে কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি–এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। রাষ্ট্রের শীর্ষ পদটির জন্য অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে।

সাধারণত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদ সদস্যদের ভোটে। তফসিল ঘোষণাসহ এ নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত করবে তিনিই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। ফলে রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে।

বিশেষ করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে নতুন রাষ্ট্রপতির সময়ে। সেজন্যই রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি- এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। রাষ্ট্রের শীর্ষ পদটির জন্য অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌঁড়ে এখন পর্যন্ত যাদের নাম আলোচনায় এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি কে হবেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের থিংক-ট্যাংকের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিভিন্ন ব্যক্তির মতামত নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

নতুন বছরের শুরুতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে আইনমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। গত ৪ জানুয়ারি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, যেহেতু তিনি (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) দুই মেয়াদ থেকেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আর থাকতে পারেন না। সেহেতু আমরা নতুন রাষ্ট্রপতি দেখব।

মো. আবদুল হামিদকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হলে সংবিধান পাল্টাতে হবে- এ কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত সংবিধান পাল্টানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

ফলে সংবিধান সংশোধন করে তৃতীয় মেয়াদের জন্য মো. আবদুল হামিদ পুনরায় রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন না এটা নিশ্চিত। আর আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরমেও জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে। এখন পর্যন্ত দলীয় ফোরমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। কিংবা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাও এ বিষয়টি ফোরামে উল্লেখ করেননি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন, সবকিছু বিবেচনা করে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে, যিনি কোনো রকম প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন।

নেতৃবৃন্দের আলোচনায় যে নামগুলো জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন দলটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

টানা দুই মেয়াদে দায়িত্বে থাকা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। সংবিধান অনুযায়ী একজন রাষ্ট্রপতি দুবারের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। সংবিধান অনুযায়ী, তৃতীয় মেয়াদে তার আর রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।

সংবিধানের ৫০(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘একাদিক্রমে হউক না হউক- দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।’

বর্তমান রাষ্ট্রপতি পরপর দুই মেয়াদে এ দায়িত্ব পালন করে ফেলেছেন। এ কারণে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নতুন কারও শপথ নেওয়ার কথা।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্পিকার হিসেবে দুইবার দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি দলমত ঊর্ধ্বে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।

এ ছাড়া তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহভাজন ছিলেন। আওয়ামী লীগের সর্বমহলে তিনি জনপ্রিয়। সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন বিরোধীদলীয় উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার ও দুবার স্পিকার হিসেবে। দীর্ঘ ৪২ বছরের অন্যতম প্রধান কর্মস্থল সংসদ থেকে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে। রাষ্ট্রের গুরুদায়িত্ব পালনকালেও জনবিচ্ছিন্ন নন আবদুল হামিদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে চলতি জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশন। সেখানে সংসদ উপনেতা নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তিনি উপনেতা না হলে রাষ্ট্রপতি পদে তাকেও দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মোশাররফ হোসেন এবং সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের  নামও আলোচনায় আছে।

সংবিধান মতে, ৩৫ বৎসরের কম বয়সের কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য নির্বাচনে অযোগ্য এবং অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।

একাধিক প্রার্থীর সুযোগ থাকলেও বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় দল মনোনীত ব্যক্তিই রাষ্ট্রপতি হবেন বলে দলের কয়েক নেতা জানান।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh