শীতের পিঠে

শামসুর রাহমান

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৪৯ পিএম

শীতের পিঠা। ছবি: সংগৃহীত

শীতের পিঠা। ছবি: সংগৃহীত

কবি শামসুর রাহমান, বাঙালির কবি। কেবল কবি নন- শিশুকিশোরদের জন্যও রচনা করেছেন অসামান্য ছড়াসমস্ত এবং ঢাকা শহরকে নিয়ে স্মৃতিগদ্য। শামসুর রাহমান তার ছেলেবেলার শীতের দিনের স্মৃতি আউড়েছেন, বিশেষত- শীতে পিঠা নিয়ে যে উৎসব হতো গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে তা এখন দেখা মেলা সত্যি ভার।

সময়ের সাথে সাথে সব বদলেছে, শহর ঢাকার এ কালের সন্তানেরা পিঠে কী তা উপভোগ করে পিঠার দোকানে গিয়ে; কবির চোখে পৌষ এলে যে পিঠে খাওয়ার ধুম লেগে যায় তা নিয়ে লিখেছেন। ছোট্ট ক্ষুদ্র এই গদ্যটি ১৯৭২ সালের ২৪ ডিসেম্বর রচনা করেছিলেন। একালের পাঠকদের জন্য লেখাটি পুনঃমুদ্রণ করা হলো।

এবার একটু দেরি করেই শীত নামলো। শীত আমার ভালোই লাগে। যদিও কোনো কোনো শীত-বিকেলে মন ভারি খারাপ হয়ে যায়, একটা নিবিষ্টতা তার সমস্ত শৈত্য দিয়ে মুড়ে রাখে আমাকে, তবু ঋতু হিসেবে শীত আমার কাছে নন্দিত। গ্রীষ্ম আমাকে পীড়িত করে। বর্ষা আমাকে ক্লান্ত করে, কিন্তু কি আশ্চর্য আমি উজ্জীবিত হই শীতকালে। আমার কর্ম-ক্ষমতা অন্যান্য ঋতুর চেয়ে এই ঋতুতেই বেড়ে যায়।

এবং শীত আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয় ছেলেবেলার কয়েকটি মধুর সকাল। মনে পড়ে কুয়াশা-মোড়া ভোরে উনুনের ধারে বসে পিঠে খাওয়ার কথা। চমৎকার পিঠে তৈরি করতে পারতেন আমার নানা। রকমারি সব পিঠে। ছেলেবেলার সেই পিঠে খাওয়ার স্বাদ এখনো আমার মুখে লেগে আছে। এখন নানির কালও নেই, পিঠে খাওয়ার ধুমও নেই। আমার ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে দুঃখ হয় আমার।

পিঠে খাওয়া কাকে বলে, বেচারীরা তো জানলোই না। একটু-আধটু পিঠে যে তারা খায় না এমন নয়, কিন্তু আমার নানি যেসব পিঠে তৈরি করতেন, সেসব সুস্বাদু পিঠের স্বাদ থেকে তারা বঞ্চিত রয়ে গেল। তাছাড়া সাধ মিটিয়ে তারা পিঠে খেতে পেলোইবা কই? পাবেই বা কী করে? পিঠে বানানোর জন্য যে সব দ্রব্য প্রয়োজন সেগুলোর দামও এত চড়া যে রোজ সকালে সেই বিশেষ খাদ্যদ্রব্যটি জঠরে পাঠানো মুশকিল।

আজকাল ঢাকা শহরে পিঠে খায় ক’জন? পিঠের পাট প্রায় উঠে গেছেই বলা যায়। বছর দুয়েক আগে ঢাকায় পিঠের একটা আধুনিক দোকান খোলা হয়েছিলো। সেখানে নানারকম পিঠে বিক্রি করা হতো। বেশ ভিড় জমতো সেখানে। বাড়িতে পিঠে তৈরি হয় না, তাই দোকানে গিয়েই রসনাকে তৃপ্ত করতেন অনেকেই। কিন্তু সেই দোকানটিও বন্ধ হয়ে গেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh