ইটভাটার আগ্রাসনে কমছে খেজুর গাছ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:২৬ পিএম

কুষ্টিয়ায় প্রায় ২০০ ইটভাটা আছে। ছবি: কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় প্রায় ২০০ ইটভাটা আছে। ছবি: কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ইটভাটার আগ্রাসনে কমছে খেজুর গাছ। কুষ্টিয়া ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের খেজুরের রস বিখ্যাত হলেও খেজুর গাছ এখন ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সে তুলনায় রোপণ হচ্ছে না খেজুর গাছের চারা। একদিকে যেমন বিলুপ্ত হচ্ছে খেজুর গাছ অন্যদিকে তীব্র হচ্ছে বায়ু দূষণ।

কুষ্টিয়ার সদর ও মিরপুর উপজেলা খেজুর গাছের জন্য বিখ্যাত। অবৈধ ইটভাটার কারণে এ জেলায় কমে গেছে খেজুর গাছের সংখ্যাও। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবিদ গৌতম কুমার রায় জানান, একদশকে কুষ্টিয়ার ৭৫ হাজার ৮৮০ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ২৮৮ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। যা প্রত্যক্ষভাবে পরিবেশ ধ্বংস করেছে।

এসব এলাকায় প্রায় ২০০ ইটভাটা আছে। যার মধ্যে ১৩৭টি অনুমোদন পেয়েছে। এগুলোতে এক মৌসুমে ১৩০দিন ধরে ইট পোড়ানো হয়। একটি ভাটায় একদিনে ১৬ টন কাঠ পুড়লে এক মৌসুমে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে ২ হাজার ৮০ টন। জেলার সবগুলি ইটভাটার হিসেব মতে, প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার মে.টন কাঠ পুড়ছে ভাটাগুলোতে।

কুষ্টিয়ার এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ হায়াত মাহমুদ বলেন, কুষ্টিয়ায় ইট ভাটার কারণে খেজুর গাছসহ অনেক গাছের ক্ষতি হয়েছে। অভিযানের কারণে এই প্রবণতাটা কমেছে এখন। গোটা জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো খেজুর গাছ আছে। মানুষ গ্রামীণ ঐতিহ্য রক্ষায় এখন অনেক সচেতন। আমরা খেজুর গাছ রক্ষার্থে কাজ করছি। নতুন করে চারাও রোপণ করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেলায় অতিতে সর্বত্র খেজুর গাছ ছিল। কিন্তু এখন ইটভাটার জ্বালানির দাপটে খেজুর গাছ কেটে সাবাড় করেছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে খেজুর গাছের চাহিদা অনেক। অনেক খেজুর গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এখন এ জেলায় যা আছে, চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

খেজুরের রস ও গুড়ের তৈরি পিঠা যেমন বাঙালির রসনার পাট। একটা সময় খেজুর গাছ ছিল গ্রামীণ মানুষের জীবিকার মাধ্যমও। এই পেশার সাথে জড়িত ছিল গ্রামীণ নারীরাও। কোমর বেঁধে তারা গুড় তৈরির কাজে নেমে পড়তেন। শীত এলে গাছিরা ধারালো দা, কোমড়ে রশি দিয়ে বেঁধে গাছে উঠে হাঁড়ি বসাতেন। সকাল বেলা হাঁড়ি ভর্তি রস নিয়ে নিচে নেমে আসতেন। ওই রস ও তৈরি গুড় বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও মাদারিপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় এখনো বাড়ির আশেপাশে ও ফসলের মাঠে দেখা যায় সারি সারি খেজুর গাছ। তবে গাছের সন্ধান পাওয়া গেলেও রস সংগ্রহে দেখা দিয়েছে সমস্যা। গাছিরা পেশা পরিবর্তন করায় এ সমস্যা হচ্ছে। ফলে খেজুরের গুড়ও দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। বাড়তি দামেও মিলে না খাঁটি গুড়। বাজার সয়লাব ভেজাল খেজুরের গুড়ে।

গাছি ও নলেন গুড় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, কয়েক বছর আগেও অনেক গাছ ছিল। ইট ভাটা ও নিয়ম না মেনে গাছ কাটার কারণে খেজুরের গাছ কমে এসেছে। শীতের সময় খেজুর গাছ কেটে ওই টাকা পয়সা দিয়ে সংসার চালাত। এখন আর গাছ নাই, দু-একটা আছে এ দিয়ে সংসার চালানো যায় না। এজন্য দৈনিক মজুরির কাছ করি।

খেজুর গাছ রক্ষায় সঠিক পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে জানান পরিবেশবিদ গৌতম কুমার রায়। 

তিনি বলেন, ইটভাটা খেজুর গাছ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। ইটভাটার সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে। মানুষের ক্ষতির সাথে পরিবেশ বিপর্যয়ও ঘটছে। কৃষি উৎপাদন ও ফলমূলের ফলন কমে যাচ্ছে। খেজুর গাছসহ গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh