দুই লেন হচ্ছে সাজেক সড়ক

রাঙামাটি

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:২৬ পিএম

সড়কের পথ ধরে গেলেই দেখা মেলে মেঘ-পাহাড়ের সাজেক ভ্যালি। ছবি: সংগৃহীত

সড়কের পথ ধরে গেলেই দেখা মেলে মেঘ-পাহাড়ের সাজেক ভ্যালি। ছবি: সংগৃহীত

দুদিকে বিস্তীর্ণ পাহাড়। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে এক লেনের সড়ক। এ সড়কে দাঁড়ালে মনে হবে দুদিকে বিস্তীর্ণ জনপদ। পথে পথে আছে মানুষের ঘরবাড়িও। যে সড়কের পথ ধরে গেলেই দেখা মেলে মেঘ-পাহাড়ের সাজেক ভ্যালি।

২০১৩-১৪ সালে রাঙামাটির সাজেকের রুইলুই পাহাড়ে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পর এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়েছে সারাদেশে। সাজেকে এসে মেঘ দেখতে ছুটে আসছেন বিদেশিরাও।

কিন্তু সম্প্রতি অত্যধিক গাড়ির যাতায়াত, অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি ও আঁকাবাঁকা ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের কারণে সাজেক সড়কে দুর্ঘটনা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের হিসাবে গত এক বছরে সাজেক-বাঘাইহাট সড়কে ৩০টির অধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে ইতোমধ্যে সড়কটিতে ঝুঁকি রোধে প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

সাজেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন, সম্প্রতি দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সাজেক যাওয়া-আসা গাড়িগুলোকে এক লেনে চলাচলের নির্দেশনা দিলেও অনেকেই সেটি মানছেন না। এ ছাড়া আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু সড়কের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।

সম্প্রতি সাজেক ঘুরে আসা মিশু দে বলছেন, সাজেক-দীঘিনালা সড়কটি সরু সড়ক হওয়ায় পাহাড় থেকে গাড়ি নামার সময় ও উপরের দিকে ওঠার সময় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ ছাড়াও অনেক চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে পর্যটক ও স্থানীয়রা হতাহত হচ্ছেন। 

সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি চাইথোয়াই অং চৌধুরী জানান, সাজেকে প্রকৃতি উপভোগ করতে আসা পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। যে কারণে এই সড়কটি প্রশস্তকরণ এখন সময়ের দাবি। সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা জানান, সাজেকে পর্যটক আসার হার দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার খবর আমরা পাচ্ছি। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের কাছে সড়কটি প্রশস্তকরণের দাবি জানাচ্ছি।

দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সাংবাদিকতা করেছেন জাকির হোসেন। বর্তমান সময়ে সাজেকের সড়কে দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে বেশকিছু পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরেছেন তিনি।

সাংবাদিক জাকির হোসেন বলেন, শুরুর দিকে যখন বাঘাইহাট-সাজেক সড়কটি নির্মিত হয় তখন এ সড়কে খুব বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু দিন দিন সড়কটির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হলেও দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। এটির প্রধানত কারণ হলো এক লেনের এই সড়কটিতে সাজেকগামী ও ফেরত আসা গাড়িগুলো বেপরোয়া গতিতে চলাচল ও অদক্ষ চালকের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।

সড়কের বিভিন্ন স্থানে পর্যটকরা গাড়ির পার্ক করে থাকেন যা এই সড়কে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আগে যেখানে সাজেকে ১৫০-২০০ গাড়ি যাতায়াত করত সেখানে এখন ৫০০০-এর অধিক গাড়ি প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে।

যে কারণে এই সড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিগত এক বছরে ৩০টির অধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সড়ক নির্মাণের কাজে জড়িত বেশ কয়েক জন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, মূলত সাজেকের রুইলুই পাহাড়চ‚ড়া নিচে ২ কিলোমিটার এলাকাতেই বেশিরভাগ সময়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।

উঁচু-নিচু ও আঁকাবাঁকা রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো বিভিন্ন সময়ে ব্রেকফেল করে থাকে আবার বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। সমতল থেকে আসা ট্যুরিস্ট বাইকাররাও পাহাড়ি সড়কে চলাচলে দক্ষ না হওয়ায় বাইকের স্পিড কন্ট্রোল করতে না পারাতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সড়ক প্রশস্তকরণ জরুরি।

দীঘিনালা-সাজেক সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক মেজর এইচএম ইকরামুল হক জানান, এই সড়কটি ২০১৩ সালে চালু হয়েছে, পুরো সড়কের দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার। বর্তমানের এক লেনের সড়কটির প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার। এই সড়কটি দুই লেনের করার জন্য একটি প্রস্তাবনা করা হয়েছে। দুই লেনের সড়ক হলে সড়কটি ৭ দশমিক ৯ মিটার প্রশস্তকরণ করা হবে। প্রকল্পটির অধীনে সড়কের ৭টি স্থানে যে সাতটি বেইলি ব্রিজ রয়েছে, সেগুলোকে আরসিসি ব্রিজ করা হবে। এতে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা যাবে। 

মেজর ইকরামুল বলেন, বিভিন্ন সড়কে বৃষ্টিপাতের কারণে সড়কে মাটিধস ও ব্রিজের গোড়ার মাটি সরে যায়, তখন আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করি।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, সাজেক-বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। সেখানে প্রতিনিয়ত প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন। তবে এই সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh