বিধবা নারীদের সাজসজ্জা সম্পর্কে ইসলামের বিধান কী?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:০৪ পিএম

বিধবা নারীদের সাদা কাপড় পরিধান করার রীতি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ছবি: সংগৃহীত

বিধবা নারীদের সাদা কাপড় পরিধান করার রীতি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ছবি: সংগৃহীত

আমাদের সমাজে অনেক কুপ্রথা আছে যা আমরা সামাজিক প্রথা বা শরীয়তের বিধান হিসাবে মানি। তেমনি একটি প্রথা বিধবা নারীদের সাদা শাড়ি পড়া। এ রীতি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বিধবা নারীদের সাদা কাপড় পরিধান করার প্রচলন প্রায় সব অঞ্চলেই আছে। কোন যুক্তিতে এবং কেনো  বিধবা নারীদের সাদা পোশাক পরিধান করতে বলা হয় তা স্পষ্ট জানা নেই।

আলেমদের মতে কোনো নারীর স্বামী মৃত্যু হলে সাদা কাপড় পরার বাধ্যবাধকতা এবং একে আবশ্যক মনে করা একটি কুসংস্কার, এর সাথে ইসলাম এবং ধর্মের কোনই সম্পর্ক নেই।

যদিও সাদাকে ত্যাগ, নির্মলতা ও শুভ্রতার প্রতীক মনে করা হয়। কিন্তু নারীদের জন্য যেকোনো সময় যেকোনো রং-এর কাপড় পরার অনুমতি রয়েছে। সেই হিসেবে কোনো রকম বাধ্যবাধকতা ছাড়াই স্বামী মারা গেলে নারীরা স্বাভাবিকভাবে সাদা কাপড় পরলে কোনো সমস্যা নেই। তবে নিয়ম করে কিংবা স্বামী মারা গেলে সাদা কাপড় পরতেই হবে এমন বিশ্বাস থেকে সাদা রং পরা জায়েজ হবে না।

ইসলামের বিধান মতে, স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময় (অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত অন্যথায় ৪ মাস ১০ দিন) সব ধরনের সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা, এটা ওয়াজিব। 

সহিহ বোখারিতে হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে। -(সহিহ বোখারি: ৫৩৩৪)

হজরত উম্মে সালামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে স্ত্রীর স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিজাব ও সুরমা ব্যবহার না করে। -সুনানে আবু দাউদ: ২২৯৮

আল্লামা কুরতুবি (রহ.) তার বিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থ ‘আলজামে লিআহকামিল কোরআন’ ও ইদ্দত সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, হিদাদ পালনের অর্থ হলো- মহিলা তার ইদ্দতকালীন সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি, অলঙ্কারাদিসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে। -আল জামে লিআহকামিল কোরআন, কুরতুবি: ৩/১১৮

সুতরাং কোনো মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পর ৪ মাস ১০ দিন অথবা অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো ধরনের সাজসজ্জা যা উৎসবাদিতে পরা হয় এমন চাকচিক্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ও অন্যান্য সাজসজ্জার প্রসাধনী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তদ্রূপ মেহেদি লাগানো, সুরমা দেওয়া থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য ব্যবহৃত রঙিন কাপড় যদি চাকচিক্যপূর্ণ না হয় তাহলে তা পরিধান করতে কোনো অসুবিধা নেই।

মূল কথা হলো, ইদ্দত অবস্থায় সাদা কাপড় পরা আবশ্যক নয়। বরং সাদা কাপড় পরিধান করাকে জরুরি মনে করাও ঠিক নয়।

হাদিসে আলোকে প্রমাণিত হয় বিধবা নারীদের জন্য চারটি বিষয় হারাম। তাহল-

১. সকল প্রকার সুগন্ধি: বিধবা নারী নিজের শরীরে কিংবা কাপড়ে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না, ঠিক একিভাবে সুগন্ধি যুক্ত বস্তুও ব্যবহার করবে না।

২. শারীরিক সাজসজ্জা গ্রহণ করা: বিধবা নারীর সাজসজ্জা গ্রহণ করা, যেমন খিযাব ও অন্যান্য রূপচর্চার বস্তু সুরমা, শরীরের তক রঙ্গিনকারী বিভিন্ন প্রকার রঙ ব্যবহার করা হারাম। 

ওষুধ হিসেবে সুরমা ব্যবহার করা বৈধ, যদি প্রয়োজন হয়, সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে নয়, সুরমা শুধু রাতে ব্যবহার করবে, দিনে মুছে ফেলবে। 

৩. সাজসজ্জার কাপড় পরিধান করা: বিধবা নারীর জন্য সাজসজ্জার কাপড় পরিধান করা হারাম। সাধারণ কাপড় পড়বে, এ সময় নির্দিষ্ট রঙের কাপড় পরিধান করার কোনো ভিত্তি নেই, সমাজে যার প্রচলন রয়েছে।

৪. অলঙ্কার: বিধবা নারীর জন্য সকল প্রকার অলঙ্কার পরিধান করা হারাম, এমন কি আংটিটি পর্যন্ত।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh