মেটাভার্স ও ভবিষ্যতের অর্থনীতি

মো. সালমান হোসাইন

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:১০ পিএম

মেটাভার্স। ছবি: সংগৃহীত

মেটাভার্স। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি মেটাভার্স একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে, যা কিনা প্রযুক্তির এক আশ্চর্য বিকাশ। মেটাভার্স শব্দগুচ্ছটির মধ্যে ‘মেটা’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে বাইরে বা অতিক্রম করে যা এবং ‘ভার্স’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘বিশ্ব’। তাহলে মেটাভার্সের অর্থ দাঁড়ায় ‘বিশ্বের বাইরের জগৎ’।

বিখ্যাত ফিকশন বা কল্পকাহিনি লেখক নিল স্টিফেনসনের ‘স্নো ক্রাশ’ উপন্যাসে প্রথম পরিচয় মেলে মেটাভার্স নামের বিজ্ঞানভিত্তিক কল্পকাহিনি জগতের। মেটাভার্স দুনিয়ার সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ রয়েছে অত্যাধুনিক সব রকম প্রযুক্তি।

সম্প্রতি ফেসবুকের মালিকানাধীন কোম্পানির নাম ‘মেটা’ হওয়ায় এ নিয়ে মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। তবে শুধু ফেসবুকই নয়, মাইক্রোসফট ও চিপ প্রস্তুতকারক এনভিডিয়াসহ আরও অনেকেই মেটাভার্স নিয়ে আলোচনা করছেন।

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের ভাষ্যমতে, ভবিষ্যতের ইন্টারনেট বা মেটাভার্সই ডিজিটাল অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে। তাহলে কীভাবে এ মেটাভার্সের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়ে যাবে আমাদের অর্থনীতি, সে সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া যাক।

করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর বেশির ভাগ কর্মক্ষেত্রগুলোয় একটা বড় অংশের কর্মীদের বাসায় বসে কর্মক্ষেত্রের কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের মহামারী পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও কর্মক্ষেত্রে তা যাতে বাধার সৃষ্টি না হয়, সে ক্ষেত্রে মেটাভার্স একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। মেটাভার্স জগতে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি থাকায় ঘরে বসেই অনায়াসে অফিসের কাজ করার এক অদ্ভুত অনুভূতি পাওয়া যাবে।

বিশ্ববিখ্যাত বিনিয়োগকারী ব্যাংক এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো গোল্ডম্যান স্যাক্স, মর্গান স্ট্যানলি এবং সিটি গ্রুপের মতে, আগামী ৩-১০ বছরের মধ্যে মেটাভার্স ৮ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে শুরু করে ১২ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিণত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অর্থনৈতিক পরামর্শকারী সংস্থা ‘অ্যানালাইসিস গ্রুপের’ এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মেটাভার্সের বিকাশের ফলে পৃথিবীর মোট জাতীয় আয় বা জিডিপি ২ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে।

বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যানালাইসিস গ্রুপের মতে, ২০৩১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপির ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বা ১ দশমিক শূন্য ৮ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাবে, যদি ২০২২ সালের মধ্যে মেটাভার্সের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা হয়। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশও এ বিশাল অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে শামিল হতে যাচ্ছে। যেহেতু ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। মেটাভার্স এতে অন্যতম ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়।

যদিও মেটাভার্সের বাস্তবায়ন এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে অল্প পরিসরে উন্নত দেশগুলো কিন্তু এর বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে। ব্যবসা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে মেটাভার্স হবে একটি বিশাল মাইলফলক। বাংলাদেশেও মেটাভার্স নিয়ে জোরেশোরে কাজ শুরু করা উচিত বলে আমি মনে করি। কেননা, ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নতি সাধনে ভবিষ্যতে মেটাভার্স অভাবনীয় ভূমিকা রাখবে।

ইএমবিএ (ব্যাচ ৩১), এফবিএস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh