যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:৫৪ পিএম
দেশসেরা হাসপাতাল হলেও মর্গে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। ছবি: সংগৃহীত
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গের ভেতর থেকে হাতুড়ি পেটানোর শব্দ কানে ভেসে আসছে। মর্গের দরজার কাছে যেতে আওয়াজ আরও জোরে শোনা গেল। শব্দটা এমন ছিল যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে লাশের মাথা ভাঙা হচ্ছে। খোঁজ নেওয়ার পর মিলল সত্যতা। দেশসেরা হাসপাতাল হলেও মর্গে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। মরিচা ধরা ছেনি দিয়ে মাথার খুলি খোলা হয়।
আর লাশ কাটা হয় ছুরি ও বাটাল দিয়ে। আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে গায়ের জোর খাটিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত কার্যক্রম চলছে। গত ২ মাস ২৫ দিনে এই মর্গে মোট ১২৭ লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। সচেতন মহলের দাবি, ময়নাতদন্তের নামে মরদেহের ওপর চালানো হচ্ছে এক ধরনের নির্যাতন।
হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা, রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, রোগীদের সন্তুষ্টি ও আস্থা অর্জন, চিকিৎসক, সেবিকা, কর্মকর্তা, ও কর্মচারীদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন, হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত, সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যসেবার সার্বিক দিকে বিশেষ অবদান রাখার কারণে সারাদেশের জেলা পর্যায়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
এরই মধ্যে জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষ অবদান রেখে দেশসেরার খ্যাতি অর্জন করে। গত ২ নভেম্বর মেলে আরও দুটি দেশসেরার অ্যাওয়ার্ড। বর্তমানে সরকারি এই হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসাসেবা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে মান্ধাতা আমলের সকল যন্ত্রপাতি। বর্তমানে ডিজিটাল মেশিনে কার্যক্রম চলছে। কিন্তু দেশসেরা হাসপাতাল মর্গের দিকে কারও নজর নেই। দীর্ঘ সময়েও এখানে সরবরাহ করা হয়নি ময়নাতদন্তের কাজে ব্যবহৃত আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি।
ময়নাতদন্তকারী বিভাগের চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাসপাতালের মর্গ হলো নামমাত্র। মর্গটি যেন নিজেই মৃত। তারই ময়নাতদন্ত প্রয়োজন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে দায়িত্বরতরা স্বাচ্ছন্দ্যে ময়নাতদন্ত কার্যক্রম করতে পারেন না। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর ইলেকট্রিক্যাল করাত, এক্সবালিনসহ উন্নতমানের যন্ত্রপাতি চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বছরে অন্তত দুবার করে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।