হতশ্রী বিপিএলই দেশের ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৩২ এএম

বিপিএলের ট্রফি নিয়ে বিভিন্ন দলের অধিনায়করা। ছবি: সংগৃহীত

বিপিএলের ট্রফি নিয়ে বিভিন্ন দলের অধিনায়করা। ছবি: সংগৃহীত

ক্রিস গেইল, ডেভিড ওয়ার্নার, আন্দ্রে রাসেল, স্টিভেন স্মিথ, কিয়েরন পোলার্ড, শহীদ আফ্রিদি, ফাফ ডু প্লেসিস, মোহাম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ আমিরের মতো খেলোয়াড়রা আলো ছড়িয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটে। কিন্তু এবার আমির ও শোয়েব ছাড়া তেমন কোনো তারকা নেই। এরই মধ্যে অনেক অপূর্ণতা নিয়ে শুরু হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এবারের আসর।

বলা যায় নবম আসরেও এসে একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের এই আসর। এবারের আসরে ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা নিয়ে শুরুতে কয়েক প্রস্থ নাটকীয়তা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন নামে হাজির হয়েছে ঢাকা ডমিনেটরস। 

অন্য সব আসরের চেয়ে এবার বিপিএল আয়োজনে এবার একটু বেশি সময় পেয়েছিল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রডকাস্টিং পার্টনার, টাইটেল স্পন্সর জোগাড় করতে পারেনি লিগ পরিচালনাকারী সংস্থাটি। নানা প্রচেষ্টার পর অবশেষে ইস্পাহানি গ্রুপকে টাইটেল স্পন্সর হিসেবে ঘোষণা করেছে টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন। এবার বিপিএল সম্প্রচার করছে নাগরিক টেলিভিশন।

কয়েক মৌসুম ধরে সেটি করত গাজী টেলিভিশন ও টি স্পোর্টস। এছাড়া বিপিএল শুরুর দিন কয়েক আগেই সংবাদ মাধ্যমের সামনে কথা বলেন সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। তারা নানা অসঙ্গতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। যার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কর্তাব্যক্তি শেখ সোহেল ও ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক। এর আগে জার্সি নিয়ে বিশৃঙ্খলার বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন খুলনা টাইগার্সের কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। 

বিপিএল নিয়ে আগের মতো আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ নামি খেলোয়াড় না থাকা। মূলত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলংকার ক্রিকেটারের আধিক্য রয়েছে এবারের আসরে। করোনাকালের বিপিএলেরও বেশ জৌলুস ছিল। এবার হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দিকে তাকালে মনেই হবে না, এখানে চলছে বিপিএলের নবম আসর। মিডিয়ার কল্যাণে যেটুকু প্রচারে রয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটি, তাতে অবশ্য নেতিবাচক বিষয়ই ছিল বেশি। একসময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা টি-টোয়েন্টি লিগের তকমা পাওয়া বিপিএলের হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখে হতাশ ক্রিকেটাররা। 

টুর্নামেন্ট শুরুর পর আগের অপূর্ণতা আর অসঙ্গতিগুলো দর্শকরা ভুলে যাবেন যদি মাঠে ভালো খেলা হয়। বিসিবি এবার ফ্র্যাঞ্চাইজি ঘোষণা করেছে কয়েক মাস আগেই। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সাতটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাচনও করে রেখেছিল দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো তখন থেকে দল গোছাতে মাঠে নামলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত।

সেরা বিদেশি ক্রিকেটার না পেলেও প্রস্তুতি ও বাণিজ্যিকভাবে কিছুটা লাভবান হওয়ার সুযোগ ছিল। বাস্তবতার নিরিখে বলতে হয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও বিশ্বকাপ ফুটবলের ডামাডোলে ফ্র্যাঞ্চাইজিরাও হয়তো ভুলে গিয়েছিল বিপিএলের কথা। তাই তাড়াহুড়ো করে শেষদিকে এসে মাঠে নেমে খেই হারিয়ে ফেলেছে তারা।

বিসিবি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলও বাজার অর্থনীতির টানাপড়েন দেখে গা-ছাড়াভাবে কাজ করেছে। কৃচ্ছ্রসাধন করতে গিয়ে আনা হয়নি ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম) প্রযুক্তি। আর এবার বিদেশি মিডিয়া বিপিএলের স্বত্ব কিনে নিয়েছে। বিপিএল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বিশ্বের ১৫টিরও বেশি দেশে দেখা যাবে খেলা। দেশগুলোর নামের তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। 

২০১২ সালে বিপিএল চালু করেছিলেন বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিছু ভুলভ্রান্তি থাকলেও টুর্নামেন্ট দ্রুতই বিশ্বের ক্রিকেটারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। এক দশকের ব্যবধানে সেই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটি বৈশ্বিক দিক থেকে এখন পেছনের সারিতে অবস্থান করছে। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh