যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৩২ পিএম
রাজিব হোসেন কাজীর কঙ্কাল। ছবি: যশোর প্রতিনিধি
হত্যার ৬ বছর পর যশোরে উদ্ধার কঙ্কালের পরিচয় ও হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। শহরের পুরাতনকসবা নিরিবিলি এলাকার জনৈক বজলুর রহমানের জমির পরিত্যক্ত সেফটি ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া ড্রাম ভর্তি কংকালটি রাজিব হোসেন কাজীর। তিনি খুলনা দিঘলিয়ার চন্দলিমহল এলাকার ফারুক হোসেনের ছেলে।
কঙ্কালের পরিচয় ও হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পিবিআই রিকসাচালক সালামকে আটক করেছে। এ ঘটনায় শেখ সজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে আসামি করে নিহত রাজিব হোসেনের পিতা ফারুক হোসেন মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন।
আটক সালাম বর্তমানে যশোর শহরতলীর কিসমত নওয়াপাড়ার আবদার ড্রাইভারের বাড়ির ভাড়াটিয়া এবং নড়াইলের লোহাগড়ার মঙ্গলহাটা গ্রামের মৃত নূর মিয়ার ছেলে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জিয়াউর রহমান আটক সালামকে আদালতে সোপর্দ করেছেন। রাজিব হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন সালাম। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল আসামির জবানবন্দি গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, রাজিব হোসেন কাজী তার যশোর শহরের চাচা হাসমতের বাসায় থেকে পুরাতন কসবার আবু তালেব সড়কের শেখ সজিবুর রহমানের অফিস এবং বাড়িতে কাজ করত। ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ রাজিব তার পিতাকে ফোন করে বাড়ি যাওয়ার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু রাজিব বাড়ি না যাওয়ায় ফোন করে চাচা হাসমতের কাছে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারে। রাজিবের পিতা ফারুক হোসেন ও মা মাবিয়া বেগম যশোর এসে অনেক খোঁজাখুজি করেন। শেখ সজিবুর রহমানের বাড়ি ও অফিসের যেয়ে খোঁজ নেন তারা। ছেলেকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে একটি জিডি করে যশোর পিবিআই অফিসে দিয়ে তারা খুলনার বাড়িতে ফিরে যায়। রাজিব নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পর শেখ সজিবুর রহমান তার অফিস ভেঙ্গে ফেলেছে বলে তারা জানতে পারেন। তারা ফকিরের উপর নির্ভরশীল হয়ে রাজিব ফিরে আসবে বলে সেই থেকে অপেক্ষা করতে থাকেন।
২০২২ সালের ৩০ মে নিখোঁজ রাজিবের চাচা হাসমত তার ভাই ফারুক হোসেনকে জানায়, যশোর শহরের পুরাতনকসবা নিরিবিলি এলাকার জনৈক বজলুর রহমানের জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য মাটি খোঁড়ার সময় পরিত্যক্ত সেফটি ট্যাংকির ভিতর থেকে উদ্ধার হওয়া ড্রামের ভিতর মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। রাজিবের পিতা ও মা যশোর এসে ড্রাম থেকে উদ্ধার হওয়া কঙ্কাল তাদের ছেলের কিনা শনাক্তের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এসময় তারা উদ্ধার হওয়া কঙ্কাল তাদের ছেলের কিনা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তের অনুরোধ করে যশোর পিবিআইকে।
যশোর পিবিআই পূর্বে করা জিডির সূত্র ধরে আদালতের আদেশে উদ্ধার কঙ্কালের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিখোঁজ রাজিবের পিতা ও মাকে নিয়ে ঢাকা সিআইডি ফরেনসিক ল্যাবে নমুনা দেন। উদ্ধার কঙ্কালের সাথে নিখোঁজ রাজিবের পিতা ও মার ডিএনএ প্রোফাইলের মিল পাওয়া যায়। তখনই ধারণা করা হয় রাজিবকে হত্যা করে লাশ গুমের জন্য ড্রামে ভরে পরিত্যক্ত সেফটি ট্যাংকের ভিতর ফেলে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল।
এ ঘটনার তদন্তকালে যশোর পিবিআই জানতে পারে, শেখ সজিবুর রহমানের বাড়িতে ওই সময় এক রিকসা চালক ভাড়া থাকত। সে রাজিব নিখোঁজ হওয়ার পর ওই বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে গেছে। রিকসা চালকের সন্ধান চালিয়ে ওই রিকসা চালক সালামকে সোমবার তার ভাড়া বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আটক সালাম জানায়, সে সজিবুর রহমানদের বাড়িতে ভাড়া থাকত। ২০১৬ সালের মাসের কোন একদিন সন্ধ্যায় সজিবুর রহমান ও অপরিচিত ব্যক্তি তার রিকসায় সদরের পাগলাদহ গ্রাম থেকে একটি নীল রঙের প্লাস্টিকের ড্রাম সংগ্রহ করে সজিবুরের বাসায় এনে রাখে।
জিজ্ঞাসাবাদে সালাম আরো জানায়, সেদিন রাতে সজিবুরসহ অপরিচিত ব্যক্তিরা রাজিবকে হত্যা করে লাশ ড্রামে ভরে তার রিকসায় করে সজিবুর রহমানের অফিসে নিয়ে যায়। এরপর রাজিবের লাশ গোপন করার জন্য সজিবুরসহ অন্যরা বাথরুমের সেফটি ট্যাংকের ভিতর ড্রাম ফেলে দিয়ে মাটিচাপা দেয়। এর কয়েক দিন পর সজিবুর তার অফিস ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছিল। সালাম বিষয়টি বুঝতের পেরে তার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিল।