তাসরিফ আহমদ
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৯ এএম
রাজধানীতে শতশত যানবাহন চলাচল করে। ফাইল ছবি
দেশে মহামারি শুরু হওয়ার পর অন্যদের মতো আমিও মাস্ক পরে ঘর থেকে বের হই। এতদিন সবাই বলেছিল, করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে আর মাস্ক পরে ঘর থেকে বের হতে হবে না। দুঃখজনক হলো, করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পরও মনে হচ্ছে, সারা বছরই মাস্ক পরে বের হতে হবে।
এ বিষয়টি আমাকে চিন্তায় ফেলেছে। কারণ আমার মাস্ক পারতে ভালো লাগে না। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানতে পেরেছি, বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে ঢাকা। লক্ষ করা যাচ্ছে, রাজধানীমুখী মানুষের স্রোত কমছে না, এ শহরে লোকসংখ্যা দিনদিন দ্রুতগতিতে বাড়লেও সে অনুপাতে আধুনিক গণপরিবহণব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। রাজধানীতে মানসম্মত গণপরিবহণব্যবস্থা গড়ে উঠবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তা লক্ষ করা যাচ্ছে না। এ কারণে এ শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শহরের বায়ুমান কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। যেভাবেই হোক অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া সৃষ্টিকারী গাড়িগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন যাতে চলাচল করতে না পারে, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমার ছোট ভাইকে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে। কিছুদিন পর তার ক্লাস শুরু হলে, তাকেও নিয়মিত মাস্ক পরে স্কুলে যেতে হবে। ডাক্তার বলেছেন, আমার ছোট ভাই নিয়মিত মাস্ক না পরলে তার শারীরিক সমস্যা আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হলো, সে মাস্ক পরতে চায় না। তাকে মাস্ক পরানো হলেও কিছুক্ষণ পর তা খুলে ফেলে। ধারণা করা যায়, অন্য শিশুরাও তার মতোই মাস্ক পরতে চায় না। প্রশ্ন হলো, একটি শহরের দূষণ যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে মাস্ক পরে কতক্ষণ সুস্থ থাকা যাবে?
ব্যস্ত এক সড়কের পাশে আমাদের বাসা। প্রতিদিন বাসার পাশ দিয়ে শতশত যানবাহন চলাচল করে। রাতে যখন ঘুমাতে যাই, তখনও গাড়ির বিকট শব্দ শুনতে পাই। কখনো কখনো যানবাহনের বিকট শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। লক্ষ করা যায়, ওয়াসার পানিতে প্রচুর ময়লা আসে। চারপাশে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানি দূষণ-এত রকম দূষণের অস্তিত্ব থাকলে আমরা সুস্থ থাকব কী করে? পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানতে পেরেছি, সেচ কাজে দূষিত পানি ব্যবহার করা হলে পানির দূষিত পদার্থগুলো খাদ্যচক্রে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনুমান করা যায়, এসব জটিল রোগের সঙ্গে পরিবেশ দূষণেরও একটি সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তা না হলে, আমাদের মতো, দরিদ্র মানুষকে একটার পর একটা রোগে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে। আমরা সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাই, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য বড় কোনো অবদান রাখতে চাই। দূষিত পরিবেশের কারণে যদি আমাদের প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে যায়, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।
তাসরিফ আহমদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা