বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন ‘অহিংস নীতিতে’

বাছির মোহাম্মদ

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৪৯ পিএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৫৩ পিএম

বিএনপির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি ও তার মিত্র দল ও জোটগুলো। এরই মধ্যে বর্তমান সংসদ থেকে তাদের সাত জন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। দলটি ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে- বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না-নেওয়ার। 

অন্য পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার তার মিত্রদের নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে বলেছেন, ‘দেশের সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে।’ এর আগে গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নয়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে।

এমতাবস্থায় বিএনপি কী করবে? দলটির নেতারা বলছেন, তারা ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। এতে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ আনুষঙ্গিক আরও দাবি রয়েছে। এসব দাবি বিবেচনায় না নিলে আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে হটানোই তাদের লক্ষ্য। বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, তাদের যুগপৎ আন্দোলন হবে অহিংস নীতিতে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, তারা জ্বালাও পোড়াও ধরনের আন্দোলন কখনো ‍করেনি। এ ধরনের কর্মসূচিতে যাবে না তারা। এজন্য হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেবে না বিএনপি।

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ১২ দলীয় জোটের নেতা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ করলে বোঝা যায়- তারা হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি নিতে চায় না।  

বিএনপি এরই মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের বেশ কয়েকটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ১০ দফা দাবিতে আগামী ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিনে দেশের সকল মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করবে বিএনপি। তার মিত্রদলগুলোও অনুরূপ কর্মসূচি দিয়েছে।

এর মধ্যে মিত্রদলগুলোকে নিয়ে ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান ও ১৬ জানুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে দলটি। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুর বাদে বাকি মহানগর ও জেলাগুলোতে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল হয়েছে। এদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল থাকায় ক্ষমতাসীন দলের আহ্বানে ঢাকায় ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য রংপুরে ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল হয়।

সদ্য বিদায়ী বছরের জুলাই মাস থেকে ডিজেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদেও এ রকম জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। তারা আগস্টে ঢাকার বাইরে এবং পরে রাজধানীতে মিছিল-মিটিংয়ের কর্মসূচি দেয়। এর পরই তিন মাসব্যাপী ১০টি সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের কর্মসূচি দেয়। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর সমাবেশস্থল নিয়ে সরকারের সঙ্গে এক ধরনের টানাপড়েন শেষে রাজধানীতে ঢাকা বিভাগীয় কর্মসূচি থেকে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফার দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করে।

বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, কয়েকটি ফেইজে (পর্যায়ক্রম) চলমান যুগপৎ আন্দোলন এগিয়ে নেওয়া হবে। এসব আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বার্তা দেওয়া হবে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার। এতেও যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাবেন তারা। যদিও বিএনপি নেতাদের অনেকে বলেছেন, দিনক্ষণ ঠিক করে দিয়ে তো আন্দোলন করা যায় না। কখন আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পাবে তা তখনকার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।

তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম ফেইজটা রমজানের আগ পর্যন্ত এবং রমজানের পর জুলাই পর্যন্ত চলতে পারে। এ কর্মসূচি নেতাকর্মীদের চাঙ্গাভাবটা ধরে রাখারা জন্য দেওয়া হবে। এজন্য এ সময়ের কর্মসূচি তত গরম হবে না বলে ইঙ্গিত দেন নেতারা।

ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চলতি বছরে রোজা শুরু হবে মার্চ মাসের ২৩ তারিখ থেকে। এর আগ পর্যন্ত কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হবে তা আলোচনা হয়েছে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। সে অনুযায়ী কর্মসূচি ঘোষিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গেল বছরের ১১ জুলাই থেকে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীরা যেভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন, তা ধরে রাখার জন্য আগামী মার্চ পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। রমজানের পর আবার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

তবে বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গীজোট গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা রোজার আগেই আন্দোলন জোরদার করব।’

আন্দোলনের দ্বিতীয় ফেইজ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। তারা বলতে চান, সরকার যদি তাদের দাবি না মেনে নির্বাচনের দিকে যায়, তাহলে এ সময় আন্দোলন জোরদার করা হবে।

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আবার বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। ইসি চলতি বছরের নভেম্বর মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। তাহলে রোডম্যাপ অনুযায়ী নভেম্বর মাস থেকে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবে অর্থাৎ দলীয় মনোনয়ন শুরু করবে নভেম্বর মাস থেকেই। 

২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচন হয়েছিল ৩০ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২৮ নভেম্বর। রাজনৈতিক দলগুলো এর আগে থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে। এবারও এর ব্যত্যয় না হওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

এজন্য নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই সরকারের সঙ্গে দফারফা করতে চায় বিএনপি ও এর মিত্ররা। এ প্রসঙ্গে নবগঠিত ১২ দলীয় জোটের নেতা, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (বিএলডিপি) সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে রোজা শুরু। তার আগ পর্যন্ত আমাদের যুগপৎ কর্মসূচি থাকবে। রোজার পর থেকে কর্মসূচির দ্বিতীয় ফেইজ ‍শুরু হবে।’

তিনি মনে করেন, আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি বলে তো কিছু নেই। তবে সরকার যদি নির্বাচনের দিকে এগোয়, তাহলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ আন্দোলনকে একটা পর্যায়ে তো নিতে হবে।’

এই আন্দোলন কীভাবে এগিয়ে নেবে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা টোকা দিয়ে নয়, ধাক্কা দিয়ে নয়, একটা সঠিক সাচ্চা ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে, শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রকম উশৃঙ্খল-বিশৃঙ্খলতায় বিশ্বাস করি না। সরকারকে বলব, দয়া করে কোনো উসকানি দেবেন না। যদি উসকানি দেন এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সকল প্রকার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আগামীদিনেও সরকার বিদায় হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে এই সরকারকে বিদায় করব।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh