মাহমুদুল হক হাসান
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৪৬ পিএম
শিক্ষা উপকরণ। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি
বৈশ্বিক সংকটের মুখে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি লাগামহীন হয়ে পড়ছে। বাজারে
কাগজের মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করছেন
পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতারা। কাগজ
সংকট দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে মরার ওপর
খাঁড়ার ঘা রূপে দেখা
দিয়েছে।
বাজারে
শিক্ষা উপকরণ যথা কাগজ, কলম,
পেনসিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, ফাইল, বোর্ড, ক্যালকুলেটর, স্কেল, কালিসহ সকল পণ্যের দাম
আকাশ ছোঁয়া।
কাগজের
মূল্য বৃদ্ধির ফলে ছাপাখানা, প্রকাশনী,
বিপণিকেন্দ্র আর ফটোকপির দোকানগুলোতে
চলছে হাহাকার। কাগজের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়ছেন
শিক্ষার্থী, সৃজনশীল বই প্রকাশক, বিভিন্ন
কার্টন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
পুস্তক
প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্টদের থেকে
জানা যায়, ৮০ / ৯০
ও ১০০ গ্রামের ডিডি
অফসেট গত বছর যেখানে
১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায়
প্রতি রিম বিক্রি হতো
সেই কাগজ এখন ৩৫০০
টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এমন
পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশনা, মুদ্রণ, পত্রিকাশিল্প, ছাপাখানা, প্যাকেজিং এর সাথে সংশ্লিষ্ট
ব্যবসায়ী ও কর্মীদের কর্মসংস্থান
পড়ছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। প্রত্যেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের সাথে
জড়িয়ে থাকে হাজারো মানুষের
জীবিকা। পুস্তক প্রকাশনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের
থেকে জানা যায়, একটি
বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে ১৬টি
পেশাদারের হাত স্পর্শ করে
থাকে। মিল মালিকদের থেকে
জানা যায়, ইতিমধ্যে অনেক
কাগজ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার
উপক্রম। আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়া
ও কাঁচামাল সংকটে পড়ছে কাগজের মিলগুলো।
দেশের
সর্বত্র ডলার ও জ্বালানির
তীব্র সংকটে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চলমান নানামুখী সংকটের মধ্যে উপদ্রবের নতুন মাত্রা যুক্ত
করেছে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী শিক্ষা উপকরণ। শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের
অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। করোনার
অভিঘাতে ও রাশিয়া ইউক্রেন
যুদ্ধের ফলে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের
বাজারে যেখানে সংসার চালাতে টালমাটাল অবস্থা সেখানে সন্তানদের লেখাপড়া তো কাঁটা হয়ে
বিধঁছে।
দেশীয়
কাগজ কলগুলোর উৎপাদনে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কাগজের
দাম লাগামছাড়া হওয়ায় একদিকে কাগজের পাইকাররা দোষ চাপাচ্ছেন মিল
মালিকদের ওপর, অপরদিকে মিল
মালিকেরা বলছেন বিশ্ব বাজারে কাগজ তৈরির মন্ড
বা ভার্জিন পাল্বের দর অস্বাভাবিক হারে
বেড়ে যাওয়াসহ দেশে জ্বালানি সংকট
ও কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চমূল্য বৃদ্ধির কথা। ফলে বাজারে
কমেছে কাগজের সরবরাহ এবং বেড়েছে কাগজের
মূল্যবৃদ্ধি। এমতাবস্থায় কাগজের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট নিরসনে
কাগজের অকেজো কারখানাগুলো চালু করা, কারখানায়
নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ করা, কাগজের অপচয়
রোধ করা, সিন্ডিকেটের কারসাজি
বন্ধ করা, স্বল্প শুল্কে
কাগজের কাঁচামাল আমদানি করাসহ কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট
মহলের সুদৃষ্টি একান্ত কাম্য।
লেখক
ও সংগঠক