সৎ মায়ের ছোড়া গরম পানিতে ঝলসে প্রতিবন্ধী কিশোরের মৃত্যু

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৬ পিএম

বরিশাল জেলা ম্যাপ।

বরিশাল জেলা ম্যাপ।

বরিশালের হিজলায় সৎ মায়ের ছোড়া গরম পানিতে ঝলতে যাওয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী এক কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ পাঁচদিন মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করার পরে আজ মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকেই সৎ মা আত্মগোপনে রয়েছে।

নিহত প্রতিবন্ধী কিশোর সাইদুল ইসলাম (১৪) হিজলা উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাউশিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম মীরের ছেলে। জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় নিজে থেকে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না।

নিহতের ভাই সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেছেন, সৎ মা তার ভাইয়ের গায়ে ফুটান্ত গরম পানি নিক্ষেপ করেছে। এতে তার শরীর ঝলসে গেছে। আর অর্থাভাবে চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে তার মৃত্যু হয়েছে।

তবে পুলিশ জানিয়েছে, ‘মৌখিকভাবে এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। মৃতদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

জানা গেছে, ‘প্রতিবন্ধী কিশোর সাইদুলের মা গত একবছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। বাবা জীবিকার তাগিদে মাছ ধরতে ১০-১৫ দিন নদীতে ভেসে বেড়াতে হয়। সৎ মা এবং আপন বোনের সাথে বাড়িতে থাকতো সাইদুল। গত ১৯ জানুয়ারি ঘটনার সময় বাড়িতে সৎ মা এবং সাইদুলই ছিল। বোন বাড়ির পাশি কাজে যায়। এসে দেখতে পান প্রতিবন্ধী সাইদুলের শরীর ঝলতে গেছে। সে বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছে।

নিহতের বড়ভাই সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, ‘ঘটনার পূর্বে আমার বোন তানজিলা রান্নাঘরে সৎ মাকে পানি গরম করতে দেখেছে। সে সৎ মায়ের কাছে পানি গরম করার কারণ জানতে চেয়েছিল; কিন্তু সে কোন উত্তর দেয়নি। তখন তানজিলা কাজের জন্য ঘরের বাইরে যায়। ফিরে এসে দেখতে পান সাইদুলের শরীর গরম পানিতে ঝলসে গেছে এবং সে বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছে।

সিদ্দিক অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘটনার সাথে সৎ মায়ের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলে অবশ্যই প্রতিবন্ধী সাইদুলের চিকিৎসার ব্যবস্থা তিনি করতেন; কিন্তু সেটা না করে উল্টো বিষয়টি তিনি গোপন করেন এবং বোন তানজিলাকেও এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য চাপ সৃষ্টি করে।

এদিকে, মাছ শিকার শেষে প্রায় ১৪দিন পরে গত ২৩ জানুয়ারি বাড়িতে ফিরে আসেন কিশোরের বাবা নুরুল ইসলাম মাঝি। এসে দেখতে পান মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তার প্রতিবন্ধী ছেলে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি অপর ছেলে সিদ্দিকসহ স্বজনদের জানান। তারা এসে ২৩ জানুয়ারি রাতে হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

সিদ্দিক বলেন, ‘হিজলায় ঝলসে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাই ওই রাতেই সাইদুলকে নিয়ে আমাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এসময় হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার চিকিৎসার জন্য চার হাজার টাকা চাঁদা তুলে আমাদেরকে দেন। ওই রাতে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ২৪ জানুয়ারি সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, মৃত্যুর পরে সাইদুলের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে নিয়ে যায়। পরে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

হিজলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘সৎ মায়ের নিক্ষেপ করা গরম পানিতে প্রতিবন্ধী সাইদুলের শরীর ঝলসে গেছে এবং এতেই তার মৃত্যু হয় বলে মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি। তবে ঘটনার সময় বাড়িতে থাকা নিহতের বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সে দাবি করেছে সৎ মাকে গরম পানি ছুড়ে মারতে সে দেখেনি। যে কারণে মৌখিক কথার ওপরে চাইলেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না।

ওসি বলেন, ‘মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সুরতহাল করা হয়েছে। মৃতদেহের বিভিন্ন স্থানে পচে-গলে গেছে। এর কারণ বের করতে বুধবার ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh