অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হাত ধরে মেয়েদের ক্রিকেটে নতুন প্রজন্ম

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৫১ পিএম

 নারী ক্রিকেট দল। ছবি: সংগৃহীত

নারী ক্রিকেট দল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে সাধারণের আগ্রহ খুব একটা নেই। ছেলেদের ক্রিকেট নিয়েই ভক্ত-সমর্থকদের যত উচ্ছ্বাস। যদিও সালমা খাতুনরা যা করেছেন সেটা পারেননি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, সাকিব আল হাসানরা। ২০১৮ সালে ভারতকে হারিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র দল হিসেবে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছিল নারী ক্রিকেট দল। 

ছেলেদের দল তিনবার ফাইনালে খেললেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। এরপরও মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে প্রত্যাশাটা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। এবার ধারাটা কিছুটা হলেও পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ক্রিকেট দল। 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকে কোনো টুর্নামেন্টে টানা তিনটি ম্যাচ জেতা বেশ কঠিন কাজ। সেটাই করেছে লাল-সবুজের দল। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে মেয়েদের এই লড়াইয়ে গ্রুপ ‘এ’র চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার সিক্সে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ দল।

প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে শুরুর পর শ্রীলংকা ও যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে অপরাজিত থেকে সেরা ছয়ে জায়গা করে নেয়। তবে সুপার সিক্সের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ। জিতলেই সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত ছিল। এখন মেয়েদের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শেষ চারের ওঠার সমীকরণ অনেকটা জটিল হয়ে গেল বাংলাদেশের।

প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে পরাজিত করা অস্ট্রেলিয়ার এই ক্রিকেট দলের পাঁচজন ক্রিকেটার নারীদের বিগ ব্যাশ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের মতো বড় প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। অভিজ্ঞতার তুলনা করলে বাংলাদেশের এই অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ক্রিকেট দলটির বেশিরভাগ সদস্য এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়নি। একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা নিয়েও দারুণ খেলছে দল। শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ২০ ওভার ব্যাট করে ১৬৫ রান তোলে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে। ব্যাট হাতে স্বর্ণা আক্তার আলাদা করে নজর কেড়েছেন এদিন।

২৮ বলে ৫০ রানের একটি ইনিংস তিনি খেলেছেন ১৭৮ স্ট্রাইক রেটে। যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দারুণ উপযোগী। ব্যাট হাতে দক্ষতা দেখানো দলের আরেক ক্রিকেটার আফিয়া প্রত্যাশা। দীর্ঘদেহী এই ক্রিকেটার দারুণ সব শট খেলে মোহিত করে রেখেছেন। এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তিনি শীর্ষ ১০ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে একজন। 

দ্বিতীয় ম্যাচের পর আফিয়ার ব্যাটিংয়ের ভিডিও শেয়ার দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল ভেরিফাইড ফেসবুক পাতায় লিখেছে, ‘ইনক্রেডিবল হিটিং’। শেষ ম্যাচে অবশ্য প্রত্যাশা মেটাতে না পেরে দশম হলেও বাকি দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে নিজেদের জাত চিনিয়ে সেরা দশে আছেন স্বর্ণা ও দিলারা আক্তাররা।

ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট ইএসপিএন-ক্রিকইনফোর ক্রিকেট বিশ্লেষক এস সুদার্শানন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি মাঠে বসে দেখেছেন। তিনি বাংলাদেশের জয়কে স্মরণীয় একটি আপসেট হিসেবে অভিহিত করে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের এই দলটার মধ্যে এমন একটা ব্যাপার রয়েছে যা আগের নারী দলগুলোর মধ্যে দেখা যায়নি। সেটা হচ্ছে পাওয়ার হিটিং, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য বড় বেশি প্রয়োজন।’ 

সালমা খাতুন, পান্না ঘোষ, সাথিরা জাকির জেসির পর নতুন একটা প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য। যা টাইগ্রেসদের জন্য দারুণ খবর। এভাবেই নতুন দিগন্তে পা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা। শত বাধা আর সামাজিক বিপত্তি পেরিয়ে আজকের অবস্থানে উঠে এসে লাল-সবুজ ক্রিকেটকে সমীহ করা পর্যায়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যই তাদের।

অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত যে সাফল্য সেটি অনুপ্রেরণা হবে ভবিষ্যতের জন্য। কারণ এই মেয়েরা ২০২০ সালে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়কে নিজেদের জন্য পাথেয় হিসেবে নিয়ে আফ্রিকার দেশটিতে খেলতে গেছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh