জুমার দিনের ১০ আমল

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:১৫ এএম

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের নামাজ আদায়। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের নামাজ আদায়। ছবি: সংগৃহীত

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার অন্যতম একটি বিষয় হল, এ দিন কালক্রমে সংঘটিত এমন কিছু মহাঘটনার নীরব সাক্ষী, যা পৃথিবীর মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল বা পৃথিবীকে নবজীবন দান করেছিল।

এমনিভাবে এ দিনই সংঘটিত হবে ঐ মহাপ্রলয়, যা এই নশ্বর পৃথিবীর সমাপ্তি ঘটিয়ে এক অবিনশ্বর জগতের সূচনা করবে। বদরী সাহাবী আবু লুবাবা ইবনে আবদুল মুনযির রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

‘নিশ্চয় জুমার দিন হল সমস্ত দিনের সর্দার। জুমার দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মহান দিবস। এমনকি এই দিন আল্লাহর কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর তথা ইসলামের দুই ঈদের দিন থেকেও মহান।’

জুমার দিনের বিশেষ পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ দিন আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন। এ দিন তাঁকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এদিনেই আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেছেন।

জুমার দিন একটা সময় আছে, যাতে বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাআলা তাকে তা-ই দান করবেন, যদি না সে হারাম কোনো বিষয়ের প্রার্থনা করে। তদ্রূপ, কিয়ামতও সংঘটিত হবে জুমার দিনেই।

হাদিসে বলা হয়েছে-

‘নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা পর্যন্ত  জুমার দিন (কিয়ামতের আশঙ্কায়) ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। পৃথিবী, আকাশ, বাতাস, পাহাড়, পর্বত, সাগর সবকিছু জুমার দিন (কিয়ামতের আশঙ্কায়) উদ্বিগ্ন থাকে।’

 -মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৫৫৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৫৪৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৪১

আরেক হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

‘সূর্য যেসব দিন উদিত হয় অর্থাৎ দিনসমূহের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এদিন আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে দুনিয়াতে নামানো হয়েছে। এদিন তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, তার তওবা কবুল হয়েছে।

এ দিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে। মানুষ ও জিন ব্যতীত এমন কোনো প্রাণী নেই, যা কিয়ামত কায়েম হওয়ার ভয়ে জুমার দিন ভোর থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত চিৎকার করতে থাকে না। জুমার দিন একটা সময় আছে, কোনো মুসলিম যদি সে সময় নামাজ আদায় করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করবেন।’

-মুআত্তা মালেক, হাদীস ২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১০৩০৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৪৬; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ১৪৩০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৭৭২। 

জুমার দিনের দশটি গুরুত্বপূর্ণ আমল

মর্যাদাপূর্ণ এই দিনের অনেক আমল হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু আমল ধারাবাহিক উল্লেখ করা হচ্ছে। ১. গোসল করা। ২. উত্তম পোশাক পরিধান করা। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৪. মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা।

এই চারটি আমলের কথা একসঙ্গে একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যদি তার কাছে থাকে। তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়। নির্ধারিত নামাজ আদায় করে।

তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে। তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ফারা হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ৩৪৩)

৫. বেচাকেনা বন্ধ রাখা : জুমার দিন আজানের পর বেচাকেনা বন্ধ রাখা গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য  উত্তম যদি তোমরা বোঝো।’ (সুরা : জুমআ, আয়াত : ৯)

৬. দ্রুত মসজিদে যাওয়া : উত্তম আমল হচ্ছে দ্রুত মসজিদে যাওয়া। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে। এরপর যে আসে সে ওই ব্যক্তি যে একটি গাভি কোরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর মতো। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফেরেশতাগণ তাদের লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি, হাদিস : ৯২৯)

৭. সুরা কাহফ তিলাওয়াত : মর্যাদাপূর্ণ এই দিনের বিশেষ একটি আমল হচ্ছে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে। (আমালুল ইয়াওমী ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২)

৮. সুরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত পাঠ : অপর হাদিসে সুরা কাহাফের শেষের আয়াত পাঠের সুফল হিসেবে দাজ্জালের ক্ষতি থেকে মুক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কেয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না। ’ (সহিহ তারগিব, হাদিস নম্বর : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক: ২/৩৯৯)

৯. বেশি বেশি দরুদ পাঠ : এই দিনের আরেকটি আমল হচ্ছে নবীজির ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। এই মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে। এই দিনে সব সৃষ্টিকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৭)

১০. দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া : জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ একটি আমল হচ্ছে দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে যে দোয়া করবে আল্লাহ তা কবুল করেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৮)। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh