নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২২ এএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:৪৫ এএম
সিজারের মাধ্যমে সন্তানর জন্ম দেওয়ার পর বাচ্ছা ও তার মা। ছবি: ইউনিসেফ
সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পরিবারের নারী সদস্যদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে সিজারের হার বহুগুণে বেড়েছে। আরো ভয়ঙ্কর যে তথ্য সেটি হলো, সন্তানসম্ভবা নারী বা তাদের পরিবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিজারের জন্য সরকারি হাসপাতালকে অগ্রাধিকার দেয় না। এ কারণে বেসরকারি হাসপাতালে সিজারের (অস্ত্রোপচার) মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার হার বেড়েছে আর সরকারি হাসপাতালগুলোতে সিজারের হার কমেছে।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের (নিপোর্ট) এক জরিপ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি আজ মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সারাদেশে তৃতীয় বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে (বিইউএইচএস) ২০২১-এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে রিপোর্টের ফলাফল প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ শাহাদাত হোসেন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক একে এম নুর উন নবী।
জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশনে বস্তিতে বসবাসকারী অন্তঃসত্ত্বা নারীর ৩১ দশমিক তিন শতাংশ সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেন। সেসব সিটি এলাকায় বস্তির বাইরে থাকা ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ নারীর সন্তান জন্মদানও হয় সিজারে। আর দেশের জেলা-উপজেলাগুলোতে যেসব শহরে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষের বাস সেসব শহরের ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ নারী সিজারে সন্তান জন্ম দেন। তবে গর্ভাবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক সেবা নেওয়া নারীদের সিজারে সন্তান জন্মদানের হার বেশি।
গবেষণায় ১২ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারী, ১৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী বিবাহিত পুরুষ, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ও সমাজের নেতারা অংশ নেন।
জরিপে দেখা যায়, সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে বস্তি, বস্তির বাইরে এবং জেলা পৌরসভায় সরকারি হাসপাতালে যেখানে সিজারে সন্তান প্রসবের হার ৪৪ শতাংশ, সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তা ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে ৪১ শতাংশ।
জরিপে আরো দেখা যায়, সিটি কর্পোরেশনের বস্তি এলাকায় সরকারিতে যেখানে অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসবের হার ৪৪ শতাংশ, বেসরকারিতে তা ৭৫ শতাংশ, সিটি কর্পোরেশনের বস্তির বাইরে সরকারি হাসপাতালে যেখানে ৫১ শতাংশ বেসরকারিতে এই হার সেখানে ৮৭ শতাংশ এবং পৌরসভার সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সন্তান জন্মদানের হার ৩৭ শতাংশ হলেও বেসরকারিতে তা ৮৮ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) আওতাধীন এই তিন শ্রেণির (সিটি কর্পোরেশনের বস্তি, বস্তির বাইরে ও পৌরসভা) প্রতিষ্ঠানে এই হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ, ৫১ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে গবেষণা নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ কে এম নুরুন্নবী বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গত ১৫ বছরের তুলনামূলক চিত্র এখানে উঠে এসেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি (প্রসব) বাড়লেও সিজারের হার আশঙ্কাজনক। এটি ভাববার বিষয়। এ বিষয়টিতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সঠিক ডাটা পেলে কোন কাজ কতদূর এগিয়েছে সেটির চিত্র ফুটে ওঠে। একইসাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও করণীয় ঠিক করা সহজ হয়। আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হলো জনবল। যে পরিমাণ দরকার তার তুলনায় খুবই কম। ফলে স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে কষ্ট হয়।