‘শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন শিশু আইন’

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৪:৪৩ পিএম

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের লোগো

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের লোগো

শিশু আইন ও প্রবেশন বিষয়ক সাংবিধানিক আলাপচারিতার মুখ্য আলোচক সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী তার বক্তব্যে বলেন, শিশুদের প্রতি আমাদের নেতিবাচক ব্যবহারই তাদের অপরাধ প্রবণ করে তোলে। শিশু আইন ও প্রবেশন আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে শিশুদের এই আচরণ সংশোধন করে তাদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। শিশুসহ প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। 

তিনি বলেন, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ, ধর্ম নির্বিশেষে সমাজের যেকোনো শিশুই আইনের প্রতিকার লাভের অধিকার রাখে এবং শিশুর অভিভাবকত্ব নির্ধারণ সংক্রান্ত মামলায় শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনায় উচিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয় তা দণ্ড বিধির ৩১৯ ও ৩২১ ধারার অধীনে অপরাধ। তাই শিশুকে স্কুলে কখনোই শারীরিকভাবে আঘাত করা উচিত নয়।  

সংবিধানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংবিধানিক আলাপচারিতার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) গতকাল মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে এ আলোচনার আয়োজন করেছে। 

ব্লাস্টের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে গেছেন। আমরা তার অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ রাখবো।

ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ফজলুল হক বলেন, শিশু আইনের সর্বাত্তক প্রয়োগ নিশ্চিতকরণে লক্ষ্যে ও সর্বস্তরের প্রসারে আমরা সকলেই বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর প্রতি কৃতজ্ঞ।

আইন ও শালিস কেন্দ্রের পরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে বয়স ১৮ থেকে ১৬ তে নিয়ে গেলে  শিশুর স্বার্থ ব্যাহত হবে।

আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিচারপতি ইমান আলী শিশু অধিকার সংক্রান্ত মামলার রায় আদালতে মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন নাই বরং এই রায় বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন - যা একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। 

যুক্তরাজ্যের অভিজ্ঞতার আলোকে বিচারপতি খাতুন সাপনারা বলেন, পারিবারিকসহ অন্যান্য মামলা সমূহের শিশুর সর্বাত্তক স্বার্থ প্রাধান্য দেয়া উচিত। শিশুর সার্বিক কল্যাণে শিশু ওয়েলফেয়ার বোর্ড কার্যকর করা উচিত। 

যুক্তরাজ্যের বিচারপতি মওরা ম্যাকগুয়ে বলেন, শিশুর সাথে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করা ন্যায়সঙ্গত নয়। বিচার ব্যবস্থাকে শিখতে হবে যে তারা শিশু,  প্রাপ্তবয়স্ক নয়। শিশুদের জন্য বিচার পদ্ধতিতে সাজা প্রদানের নমনীয়তা প্রসারিত করেছি। শিশুদের অপরাধে বয়স এর পাশাপাশি তার মানসিক অবস্থা বিবেচনায় আনতে হবে। শিশুর জন্য প্রদত্ত সাজা কমানো এবং শিশুদের উন্নয়নের জন্য প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে। 

সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এম. এম. মাহমুদউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে ৭২ জন প্রবেশন কর্মকর্তা আছেন যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে কয়েক হাজার প্রবেশন মামলা চলমান আছে, যা আমরা প্রবেশন আইন ও প্রবিধান অনুযায়ী হচ্ছে। ২০২১ সালের খসড়া প্রবেশন আইন চূড়ান্ত করার অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ও ডায়ভার্সনের কারণে শিশু আইনের বাস্তবায়ন আরো বেশি হচ্ছে। চাইল্ড অ্যাফেয়ার্স পুলিশ ডেস্ক রয়েছে যেখানে প্রচুর পরিমাণে ডায়ভার্সন হচ্ছে। 

এ আলাপচারিতায় মূলত শিশু আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সংবিধানের মৌলিক চেতনার প্রতিফলনের যথার্থতা তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীরা শিশু আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বিদ্যমান প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০-কে সংস্কার করে দেশের ফৌজদারি বিচারে প্রবেশন ব্যবস্থা কার্যকর ও ফলপ্রসূভাবে বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। 

ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেনের সঞ্চালনায় আলাপচারিতার শেষে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh