চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:৪৮ পিএম
শীতজনিত কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। ছবি: চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রচণ্ড শীতে চুয়াডাঙ্গা জেলা স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে এতে বোরো ধানের বীজতলা ও শীতকালীন সবজির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। কিন্তু শীতের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের খাদ্য সহায়তার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের। শীত ও কুয়াশাচ্ছন্ন জেলার মানুষ অনেকটা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, এ জেলায় প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। জেলা ব্যাপী শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।
আজ বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ। দৃষ্টি সীমা ৫০০ মিটার। এর আগে এদিন সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়ে ছিল। ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। গত ১৫ দিন থেকে এ জেলায় ক্রমাগত তাপমাত্রা কমছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না। দিনে শীত কম হলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। এর ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বোরো মৌসুমে ৩৬ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৮০৬ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১২ হাজার ৪৭৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হবে। এ মৌসুমকে সামনের রেখে কৃষকরা বীজতলা তৈরি করেছে। সেখানে উৎপাদিত চারাগাছ মাঠে রোপণ করা হবে। কৃষকরা বীজতলা আগাম ২০ থেকে ২৫ দিন আগে তৈরি করায় শীত জনিত কারণে সেখানকার চারাগাছ নষ্ট হবে না। বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি বীজতলার চারাগাছ রোপণের পর্যায়ে চলে এসেছে। তবে কিছুটা পরে যে সকল কৃষক বীজতলা তৈরি করেছে, তাদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চারাগাছের ওপরে জমে থাকা শিশির সরিয়ে দিয়ে, পলিথিনে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যাতে শিশির জমে বীজতলায় উৎপাদিত চারা নষ্ট হতে না পারে। সেই সঙ্গে শীত কালীন সবজি যাতে ছত্রাকজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষিতে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে শীতের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের খাদ্য সহায়তার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেই জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রত্যেকদিন যারা রোজগার করে সংসার চালায় তারা পড়েছে সবচেয়ে সমস্যায়। শীতজনিত কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে তারা। চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসান চত্বরের পূর্বপাশে এদিন সকালে কাজের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল প্রায় ৫০ থেকে জন খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের কাঁথুলী গ্রামের মরহুম মকছেদের ছেলে তোয়াক্কেল (৫২), একই উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের হানুড়বারাদী গ্রামের মকছেদ আলী মন্ডলের ছেলে কাদের (৫৫), ওই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মোশারফ (৬১), গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের আকবার বিশ্বাসের ছেলে মহি উদ্দিন (৬০) ও আলমডাঙ্গা উপজেলার আঁইলহাস ইউনিয়নের বলেশ্বরপুর গ্রামের মজহার বিশ্বাসের ছেলে ইউসুফ আলী (৭০) সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, শীতের কারণে ৩ থেকে ১৮ দিন কেউ তাদের কাজে নেয়নি। সে কারণে এক রকম না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের দিন কাটছে। তাদের দেখার কেউ নেই। ঠিক অভিন্ন কথা বলে রিকশাচালক রাজ্জাক ও ইলিয়াস এবং খালেক।
চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আরাফাত রহমান জানান, শীতজনিত কারণে কর্মহীন মানুষের খাদ্য সহায়তার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বড় রকমের দুর্যোগ বা ক্ষয়ক্ষতির ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের একতিয়ার আছে।
তিনি আরো বলেন, এখন আমরা কম্বল সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে কাজ করছি। জেলার চাহিদা মোতাবেক কম্বলগুলো পৌঁছুলে সেগুলো শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
শীতজনিত কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের খাদ্য সহায়তা প্রসঙ্গে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, এ ধরনের চাহিদা আমাদের কাছে কেউ উপস্থাপন করেনি। আপনার মাধ্যমে যেহেতু জানলাম, সে কারণে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব এবং খাদ্য সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করব।