নেত্রকোনায় বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:২০ এএম

ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। ছবি: নেত্রকোনা প্রতিনিধি

ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। ছবি: নেত্রকোনা প্রতিনিধি

বোরো চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে নেত্রকোনার কৃষকরা। কয়েক দিনের শৈত্য প্রবাহ আর ঘন কুয়াশার সাথে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় বোরো আবাদ রোপণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আর শীতের ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে জমি প্রস্তুতে পানি সেচ আর হাল চাষ চলছে।

দিন ভর ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষি উপকরণ কীটনাশকসহ সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। নেত্রকোনার চাষিরা বলছেন শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক মতো থাকলে সুষ্ঠুভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রোপণকৃত জমির মধ্যে উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৭১ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ১৩ হাজার ৭৯৯ হেক্টর। উফশী জাতের মধ্যে উন্নত জাত হচ্ছে জিরাশাইল এবং ব্রি-২৮।

গত বছর বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা কম হওয়ার কারণ হচ্ছে ভূগর্ভের পানির ব্যবহার কমিয়ে রবি শস্যের দিকে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানো হচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকা বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, পূর্বধলা উপজেলা এবং মদন ও কেন্দুয়া উপজেলার কিছু এলাকায় ধানের পরিবর্তে গম, ডাল, ভুট্টা ও সরিষার আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের। বোরো চাষে মাঠে মাঠে জমিতে পানি সেচ ও হাল চাষে ব্যস্ত চাষিরা। শীতের ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চলছে কৃষকদের ব্যস্ততা। অন্যদিকে তৈরি জমিতে চারা রোপণ করা হচ্ছে।

বোরো আবাদে সময় শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়ায় মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিঘা প্রতি ৯০০টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত চুক্তি দিচ্ছেন চাষিরা। আবার অনেকে ৬০০টাকা দিনমজুরি দিয়েও শ্রমিক নিচ্ছেন। গত কয়েকদিনের শৈত্য প্রবাহের ফলে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলার কিছুটা সমস্যা হয়েছে। রবিশস্য জমিতে আবাদের জন্য বীজতলার বীজ হলুদ হয়ে শুকিয়ে মারা গেছে। এতে করে কৃষকদের কিছু সমস্যা সম্মুখীন হতে হবে। শীত আর কুয়াশায় বোরো আবাদে সমস্যা হতে পারে এ জন্য অনেক কৃষক জমি প্রস্তুত করে রোপণের জন্য অপেক্ষা করছেন।

নেত্রকোনা সদর উপজেলার আমলী গ্রামের সেলিম আহমেদ বলেন, প্রচণ্ড শীতের কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না। মজুরি বেশি দিয়েও চাহিদা মোতাবেক কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের কারণে চাষাবাদ কয়েকদিন পিছিয়ে গেছে। জমির হালচাষ থেকে শুরু করে চারা রোপণ পর্যন্ত বিঘা প্রতি প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ হবে মনে হচ্ছে। তবে আমরা যারা কৃষক আমাদের দাবি বিদ্যুৎ কৃষকের চাহিদা পূরণে সরবরাহ করা হয়।

বারহাট্টা উপজেলার দেওপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, এখন বোরো আবাদের মৌসুম। সবাই জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত। কৃষি উপকরণসহ সব ধরনের সারের দাম কিছুটা বাড়তি। তবে আবহাওয়া সঠিক থাকলে ফসল ভালো হবে। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে জমিতে চারা রোপণ করলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুজ্জামান জানান, শৈত্য প্রবাহ  দীর্ঘায়ত হওয়ায় বোরো চাষ কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। অতিরিক্ত শীতের মধ্যে জমিতে চারা রোপণ না করতে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে চারা মরার হারটা বেড়ে যায় এবং কিছু বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। শীতের হাত থেকে বীজতলা রক্ষা করতে কৃষকদের পলিথিন ব্যবহার করতে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। চারা জমিতে লাগানোর পূর্বে কিছুটা ইউরিয়া ও থিয়োভিট পাউডার স্প্রে করতে হবে। এতে চারা দ্রুত সতেজ হয়ে উঠবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সার পর্যাপ্ত থাকার পরও কিছু দোকানে কৃষকদের কাছ থেকে অনিয়ম করে দাম বেশি নেয়া হচ্ছে অভিযোগ শুনেছি। এই নিয়ে কৃষি বিভাগ থেকে মনিটরিং করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh