অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ জবির পরিবহন পুলে

জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৩:৩৮ পিএম

জবির পরিবহন। ছবি: জবি প্রতিনিধি

জবির পরিবহন। ছবি: জবি প্রতিনিধি

ঢাকা থেকে কুমিল্লা রুটে চলাচল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস গোমতী। শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করার উদ্দেশ্য ২০২০ সালে বাসটি চালু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটি ছিল কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তির। তবে এ প্রাপ্তিকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে বাসের চালক-হেল্পার হাতিয়ে নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লাখ টাকা।

শুধুই কুমিল্লা রুটের বাসের চিত্র এটি নয় বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের সবগুলো রুটের বাসে চলছে এসব আর্থিক অনিয়ম। এ আর্থিক অনিয়মের টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বাসের চালক হেল্পার, বাসের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পরিবহন পুলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমনটা অভিযোগ করছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, কুমিল্লাগামী গোমতী বাস সপ্তাহে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার নিয়মিত পাঁচদিন শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাতায়াত করে। প্রতিদিন সকাল ৬টায় কুমিল্লা পুলিশ লাইন থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং বিকেল সাড়ে ৩টায় পুনরায় কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা করেন বাসটি। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গোমতী বাসটি প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সকাল ৬টায় কুমিল্লা থেকে রওনা করলেও বাসের লগ বইয়ে উল্লেখ আছে ভোর ৪ থেকে ৫ টা এবং ক্যাম্পাস থেকে বাসটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কুমিল্লা পৌঁছালেও লগ বইয়ে উল্লেখ করা আছে রাত ৯, ১০ থেকে ১১টা পর্যন্ত। 

এদিকে শুধু গোমতী বাস নয়, মিরপুর রোডের অনির্বাণ- ১, ঐতিহ্য, উত্তরণ- ২, বিজয়, জবি টু মিরপুর, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জে রোডের বাসগুলোসহ  অধিকাংশ বাসে লগবইয়ে অতিরিক্ত সময় উল্লেখ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এসব রোডের বাসে অনুসন্ধান করতে গিয়ে একাধিকবার চালক- হেল্পার টের পেলে লগবইয়ের ছবি কিংবা ভিডিও সংগ্রহ করা যায়নি। 

গোমতী বাসটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সময়কালে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। গল্প হলেও সত্যি, ঠিক ওই তারিখ থেকেই বাসটিতে হয়ে আসছে এসব অনিয়ম। 

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে, এ পর্যন্ত গোমতী বাসটিতে দৈনিক ৪ ঘণ্টা করে অতিরিক্ত সময় দেখিয়ে চালক ও হেল্পার পরিবহন পুলের সহায়তা নিয়ে ঘন্টা প্রতি ৬৪ টাকা হারে তিন বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন।

গোমতী বাসের চালক ইছহাকের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি। এরপর বাসের হেল্পার শাহাজাহানের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে সাংবাদিক পরিচয় শুনে কেটে দেন এবং অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মিরপুর রোডের বাসগুলোর খবর নিতে। শুধু আমাদের বাসে অভিযোগ আসে। 

পরবর্তী সময়ে গোমতী বাসের চালক ইছহাক মিয়া বলেন, আমাদের বছরে অতিরিক্ত ২৪০ ঘণ্টা সময় দিবে বলেছেন পরিবহন পুল কিন্তু এখন ১০৪, ১০৫ অথবা ১০৭ ঘণ্টা দেয়। তবে তিনি অতিরিক্ত সময়ের কথা অস্বীকার করেন।

গোমতী বাসে নিয়মিত যাতায়াতকারী নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বিষয়গুলো সবার চোখের সামনে ঘটে কিন্তু কেউ কিছু বলে না। মাঝেমধ্যে প্রতিবাদ করলে চালক বিষয়টি বিভিন্ন অজুহাতে এড়িয়ে যান। এছাড়াও ইছহাক মামার সামনে কোনো শিক্ষার্থী লগবই ধরতে গেলে খারাপ আচরণ করেন।

এছাড়াও, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতকারী প্রতিটি বাসে আনা-নেওয়ার পথে বাহিরের যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করেন বাস চালক ও হেল্পাররা এমন ভিডিও চিত্র হাতে এসেছে প্রতিবেদকের নিকট। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসের চালক-হেল্পার বলেন, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কাজ করে যেই টাকা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে মাঝেমধ্যে বাইরের যাত্রী উঠায়। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোমতী বাসের দায়িত্বরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়স্থ কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সংসদের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কোনো সংযোগ স্থাপন করা যায়নি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.  কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। পরিবহন পুলের পরিচালকের সাথে আমি কথা বলব। 

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমি পরিবহন পুলের সকল অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh