দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, তবুও অখুশি বিতরণী সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৮ এএম

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। ছবি: সংগৃহীত

এক মাসে দুই দফা বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। জনসাধারণ এক প্রকার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পর। তারপরও বিতরণ কোম্পানিগুলোকে খুশি করতে পারেনি সরকার।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের মার্চে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে বাল্ক দাম বেড়ে হয় ৫ টাকা ১৭ পয়সা। গত বছর ডিসেম্বরে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাল্ক মূল্যহার বাড়ানোয় বাল্ক দাম বেড়ে হয় ৬ টাকা ২০ পয়সা। সর্বশেষ পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ছে ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এতে বাল্ক বিদ্যুতের দাম দাঁড়াবে ৬ টাকা ৭০ পয়সা।

সংশোধিত মূল্যহারের ভিত্তিতে ২০২০ সালের মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্যহার ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে গড় মূল্যহার দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ১৩ পয়সা। আর চলতি বছর পরপর বিদ্যুতের গড় মূল্যহার ৫ শতাংশ করে বাড়ানো হলো। এতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ টাকা ৮৬ পয়সা।

ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ৫ শতাংশ বাড়ানোর পরও আমাদের লস হবে। কারণ পাইকারিতে ১৯ শতাংশ বাড়ানোর পর আমরা বিইআরসিতে আবেদন করি। তখন আমরা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। দুবারে ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আবার পাইকারিতেও ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, এতে আমরা লসে আছি। প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা লস হচ্ছে। দাম আরও বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী বলেন, আগে পাইকারিতে প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, তার সঙ্গে আরও ৮ শতাংশ যোগ হলো। আর খুচরায় মোট ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এটি দিয়ে আমাদের হবে না, আরও বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে আমরা শিগগিরই বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে আবেদন জানাব।

তিনি বলেন, গত মাসে আমাদের প্রায় ৫২ কোটি টাকা পিডিবিকে অতিরিক্ত পেমেন্ট করতে হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, পাইকারিতে ১৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর পর প্রতি মাসে প্রায় ৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত দিতে হতো। এর সঙ্গে আরও ৮ শতাংশ যোগ হয়েছে। আর খুচরা ১০ শতাংশ বাড়ানোয় সেটি বিয়োগ হবে। সব মিলিয়ে আমাদের আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে লোকসান হবে না।

বিতরণী সংস্থাগুলোর দাবি, বিতরণ সংস্থাগুলো পিডিবির কাছ থেকে পাইকারি কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। এখন পাইকারির দাম যে হারে বাড়ছে সেই হারে খুচরা পর্যায়ের দাম না বাড়ানো হলে লোকসান হবেই। তাই দাম আরও বাড়ানোর বিকল্প নেই। লোকসান এড়াতে আরও ১০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে দাবি করছেন তারা। শিগগিরই বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে দাম বৃদ্ধির আবেদন করার কথাও বলছেন তারা। পাইকারি বিদ্যুতের একমাত্র ক্রেতা ও বিক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে বিতরণকারী সংস্থা বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও নেসকো।

সংস্থাগুলো বলছে, পাইকারিতে ১৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর পর লোকসান হওয়ায় বিইআরসিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ২৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন বিইআরসি কারিগরি কমিটি প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের খুচরা দাম ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ টাকা ১০ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করে। সেই হিসাবে খুচরা বিদ্যুতের দাম গড়ে ৭ দশমিক ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ২৩ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তা না করে সরকারের নির্বাহী আদেশে খুচরায় দুবারে ১০ শতাংশ বাড়ানো হলেও পাইকারিতে আরও ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। পাইকারিতে মোট প্রায় ২৮ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং বিতরণ সংস্থাগুলোর লোকসান হবেই এবং তা রোধে দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh